logo

উনর গেরোয় আটকে ছিলাম যখন

  • August 12th, 2022
Reminiscence, Suman Nama

উনর গেরোয় আটকে ছিলাম যখন

উনর গেরোয় আটকে ছিলাম যখন

সুমন চট্টোপাধায়

বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে বসে থাকার মানে কী?

একটাই৷ বাংলা সংখ্যামালার মধ্যে ৫ সবচেয়ে কদর্য৷ এক্কেবারে বেগুনফুলি আম৷

বাংলার পাঁচ তার মানে আদৌ দৃষ্টিনন্দন কিছু নয়৷

পাঁচের পাশে যদি নয় বসে তাহলে তো সোনায় সোহাগা৷ ঠিক যেন টেনিসের কোটের্র দুই উইলিয়ামস সহোদরা৷ আমার কাছে সবচেয়ে অবাঞ্ছিত সংখ্যা-যুগল৷

অথচ আমি সেই উনর গেরোয় পরে গেলাম৷ ন্যুমারো উনো হলে তবু কথা ছিল, মহম্মদ আলির মতো বলতে পারতাম শোনো ভাইসব, আমিই শ্রেষ্ঠ! কিন্তু আমি এ কথা বললে তো রেসের মাঠের ঘোড়াগুলোও অট্টহাস্য শুরু করে দেবে!

বাঁচোয়া একটাই, সমস্যাটা স্ব-কৃত নয়, এক্কেবারে বয়সের দোষ৷ আমার বয়সও যে একদিন ৫৯ হতে পারে সে কথা আমি কখনও দুঃস্বপ্নেও ভেবেছিলাম নাকি! আমি কি পাগল!

উনষাটের মাহাত্ম্য বুঝতে সবজান্তা উইকিপিডিয়ার দ্বারস্থ হলাম৷ এর চেয়ে যদি গ্রিকে লেখা হোমারের ইলিয়ডের পাতা ওল্টাতাম বোধহয় কিছুটা হলেও বোধগম্য হত৷ যেমন অঙ্কে-it is an Einstein prime with no imaginary part, it is the 17th smallest prime number, an irregular prime, a safe prime and the 14th supersingualr prime৷ বিজ্ঞানে-the atomic number of praseodymium, a lanthanide. সঙ্গীতে-Beethoven’s Opus 59 consists of the three so called Razumovsky Quartets.

মাথাটা বনবন করে ঘুরতে লাগল৷ পালিয়ে বাঁচলাম৷

দেখি কম্পিউটারজি, অন্য কোথায় যুৎসই কী আছে!

প্রথম নজরকাড়া তথ্য, এই দুনিয়ায় নাকি উনষাটটি দেশ আছে যেখানে গেলে ভারতীয়দের ভিসার প্রয়োজন হয় না৷ লাভের লাভ এইটুকু হল বেশ কয়েকটি অজানা দেশের নাম জানা হয়ে গেল— ফাইরো ম্যাসিডোনিয়া, সালবার্ড, মন্টসেরাট, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস, টার্কস আন্ড কাইকোজ আইল্যান্ড, কুক আইল্যান্ডস, নিউই, সামোয়া, কমোরস আইল্যান্ড, কেপ ভার্দে, সাও টোম অ্যান্ড প্রিন্সিপি, নাউরু, পালাউ, টুভালু! ওরেব্বাস, নামগুলো দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায় কেন ভিসা লাগে না৷ লাগে না কারণ কেউই বোধহয় যায় না এ সব আজব দেশে!

এগোচ্ছি আর ব্যাপক উৎসাহিত হচ্ছি৷ বিলক্ষণ বুঝতে পারছি ‘লাইফ বিগিনস অ্যাট সিক্সটি’ নেহাতই বুড়ো-ভোলানো স্তোকবাক্য নয়৷ জেমস বনডের ছবিগুলোয় জিরো জিরো সেভেনের সেই ঠাকুমা-সদৃশ মহিলা বসটির কথা একবার স্মরণ করুন৷ ডেম জুডি ডেঞ্চ৷ জীবনের প্রথম ছবিই ষাটের চৌকাঠ পেরোনোর পরে৷ এই খবর জানিয়ে বিলেতের এক্সপ্রেস কাগজ বরাভয় শোনাচ্ছে, ‘সিক্সটি ইজ দ্য নিউ লঞ্চপ্যাড ইয়ার ফর অ্যাডভেঞ্চার, অপরচুনিটি অ্যান্ড চেঞ্জ, অ্যাকরডিং টু এ ফ্রেশ রিপোর্ট বাই সোশ্যাল সায়েন্টিস্ট৷’ সমাজবিজ্ঞানী বলে কথা, তাও আবার সাহেব, ভুল বকতে যাবে কোন দুঃখে?

বিলেতের দিকে তাকালে অবশ্যই মনটা চনমনে হয়ে ওঠে৷ সেখানে একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, অবসর গ্রহণের পরেই সে দেশে নাকি কলেজে ভর্তি হওয়ার ধুম শুরু হয়ে গিয়েছে৷ প্রিসকিলা সিটিয়েনিই নামের এক অসীম সাহসিনী ‘গ্রেট-গ্রেট-গ্র্যান্ডমাদার’ প্রাইমারি ইস্কুলে নাম লিখিয়েছেন মাত্র নব্বই বছর বয়সে৷ সে দেশের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস-এর একটি রিপোর্ট বলছে অল্পবয়সীদের চেয়ে সে দেশে ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা তুলনায় অনেক বেশি৷ একটা ডিভোর্স মানে দু’টি শূন্যস্থান, দু’টি নতুন প্রেমের সমূহ সম্ভাবনা৷ কলকাতায় বাজার খারাপ দেখলে তার মানে কালাপানি পার হওয়াটা মাস্ট!

সাহিত্য চর্চা কিংবা লেখালেখির জগতে তো বুড়োদের সংখ্যা ভূরি ভূরি৷ গবেষণা করতে গিয়ে জানতে পারলাম, হার্ডিঞ্জ গিফার্ড নামের এক বিলিতি সাহেব কুড়ি খণ্ডে ইংল্যান্ডের আইন কানুন নিয়ে এনস্লাইকোপিডিয়া লিখতে শুরু করেছেন নব্বই বছর বয়সে৷ ড্যানিয়েল ডেফো তাঁর জগদ্বিখ্যাত রবিনসন ক্রুশো লিখেছিলেন ষাটের পরে৷ ঘরের কাছে একই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন কিশোরগঞ্জের চির-যুবক নীরদচন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ও৷ মনে আছে প্রায় সিকি শতক আগে অক্সফোর্ডের লাথবেরি রোডে নিজের বাড়িতে বসে বীর দর্পে নীরদবাবু আমাকে বলেছিলেন, লোকে যখন লেখালেখি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবে তিনি তখন শুরু করেছেন৷ বলছেন যখন ভদ্রলোকের বয়স তখন নব্বই ছুঁই ছুঁই৷ তাঁর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড দাই হ্যান্ড গ্রেট অ্যানার্ক তখন সম্ভবত ছাপাখানায়৷

আইনস্টাইন অবশ্য মনে করতেন না বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বুড়োদের কোনও অবদান থাকতে পারে৷ তাঁর স্পষ্ট কথা ছিল, ‘এ পার্সন হু হ্যাজ নট মেড হিজ গ্রেটেস্ট কনট্রিবিউশন টু সায়েন্স বিফোর দ্য এজ অব থার্টি উইল নেভার ডু সো৷’ অথচ আর এক পদার্থবিজ্ঞানী স্যার উইলিয়াম ক্রুকসই মিথ্যে প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন আইনস্টাইনের থিওরি৷ রেডিওঅ্যাক্টিভিটি পরীক্ষা করার প্রথম যন্ত্রটি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন তিরিশের আটত্রিশ বছর পরে৷ জেমস পারকিনসন নিজের নামাঙ্কিত অসুখটি যখন চিহ্নিত করলেন তাঁর বয়স তখন বাষট্টি৷

ফ্যাশন দুনিয়ার দিকে তাকান চমকে যাবেন বৃদ্ধদের দাপট দেখে৷ পঁচাশিতেও নিজের সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র সম্রাট ছিলেন কোকো শ্যানেল৷ সেখানকার হেড ডিজাইনার কার্ল ল্যাগারফিল্ড এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ৮২ বছর বয়সে৷ আটষট্টি বছর বয়স পর্যন্ত কার্ল ছিলেন হাতির মতো মোটা৷ তার পরেই তিনি নব্বই পাউন্ড অক্লেশে ঝরিয়ে দিয়ে শুরু করেন ‘স্কিনি টাইট’ ফ্যাশন৷ মানে নতুন শরীর, নতুন জীবন৷

নিজের রেস্তোরাঁ চালাতে গিয়ে কর্নেল হারল্যান্ড স্যান্ডার্স যখন খাবি খাচ্ছেন, হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের ফ্রায়েড চিকেনের ব্র্যান্ডটির ফ্র্যানচাইজি দেবেন৷ তার পরেই দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় হল কেএফসি-র৷ স্যান্ডার্সের বয়স তখন বাষট্টি৷ প্রতি মুরগিতে তাঁর প্রাপ্য ছিল চার সেন্ট৷ বিন্দু বিন্দু করে সিন্ধু হল অচিরেই। ৭৪ বছর বয়সে একটা ভদ্রস্থ বেতনের বিনিময়ে স্যান্ডার্স বেচে দিলেন নিজের ব্যবসা৷ বুঝিয়ে দিলেন চেহারার মতো তাঁর মস্তিষ্কটি আদৌ ভোঁতা নয়৷

ইন্টারনেট অনেক হল, মনে হল এ বার নিজের দিকে তাকাই৷ হঠাৎ মনে পড়ে গেল, ৫৯ সংখ্যাটি শুনলেই আমার বুকের ভিতরে একটা চাপা ক্ষত অযথা নতুন করে চাগাড় দিয়ে ওঠে, চোখের পাতা-জোড়ায় শিশিরের ছোঁয়া অনুভব করি৷ একজন রুগ্ন, শীর্ণকায়া, রমনীর কথা মনে পড়ে যায়৷ আমার গর্ভধারিনী৷

আমার অনুপস্থিতিতে, আগাম কোনও নোটিস না দিয়ে তিনি কেওড়াতলার চুল্লিতে গা ঢাকা দিয়েছিলেন এই ৫৯ বছর বয়সেই৷

আমার বয়স তখন মাত্র ২৭৷ তার পর ৩২টি বছর ধরে উনষাটে আমি কেবল মায়ের প্রতিচ্ছবিটি দেখতে পাই৷ পেয়ে শিউরে উঠি, ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েও নিজেকে একেবারে নিঃসঙ্গ লাগে৷

আমারও উনষাটে মা কি তাঁর কাছে আমাকে ডেকে নেবেন? বলবেন, অনেকক্ষণ বাইরে থেকেছিস এ বার ফিরে আয়?

জানি না৷ তবে তেমনটা সত্যিই হলে বেশ হয় কিন্তু! কত কত দিন, কত কত রাত কেটে গেল মাকে দেখি না, মায়ের গায়ে জড়িয়ে থাকা শাড়ির গন্ধটাও আর নাকে আসে না, বেশি রাতে বাড়ি ফেরার সময়ও ভাবতে ভুলে গিয়েছি, মা জেগে বসে আছেন, ছেলে এলে ঠান্ডা জল হয়ে যাওয়া ভাত আবার গরম করবেন বলে৷ আমার মা এখন ফ্রেমে বাঁধা সাদা-কালো ছবিতে, বাড়ির কোন ঘরে কোন সময় সেটি রাখা থাকে তা নিয়েও কোনও ভ্রূক্ষেপও থাকে না আর৷ প্রয়াত স্বজনের জন্ম অথবা মৃত্যুদিনে ছবিতে মোটা রজনীগন্ধার মালা ঝোলানো আমার ধাতে নেই, ক্যালেন্ডারে দিনগুলি লাল কালি দিয়ে গোল করে রেখে দেব, দেখলে মনে পড়বে এই ভরসায়, আরও অনেক অভ্যাসের মতো এটিও রপ্ত করা হয়ে ওঠেনি আর৷ নিজের অলক্ষ্যে সময় আমাকে কী ভাবে যেন বেইমান করে তুলেছে, মা তুমি কিছু মনে কোর না কিন্তু৷ করবেই বা কেন, তোমার পেটের সন্তানকে তোমার চেয়ে ভালো কেই বা চিনবে মা!

উনষাট মানে টার্মিনাসের আগের স্টপ৷ অন্তত ঘড়ির দিকে তাকালে সেটাই তো মনে হয়৷ মিনিট অথবা ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগে কাঁটাটি এসে ওই উনষাটেই থামে, বৃত্তটি সম্পূর্ণ হবে ঠিক তার পরক্ষণেই৷ ঘণ্টা হলে ঢং করে ঘ‌ড়ির ঘণ্টা জানিয়ে দেবে অক্সিজেন নেওয়ার বরাদ্দ মেয়াদ থেকে খসে গেল আরও একটি ঘণ্টা৷ আচ্ছা, ঘড়ির নিয়ম মেনেই কি আমাদের জীবনের নিয়মও তৈরি হয়েছে নাকি! নইলে ষাট পূর্ণ হলেই চাকরি-বাকরিতে বাধ্যতামূলক যতি চিহ্ন টেনে দেওয়া হয় কেন? কেন বাহান্ন কিংবা বাষট্টি বা বাহাত্তরে নয়! চাকরদের ক্ষেত্রে কোন যুক্তিতেই বা ধরে নেওয়া হয়ে থাকে যে লোকটা ষাটের চৌকাঠ পেরোনো মাত্র বৈকুণ্ঠে বাসা ভাড়া করার উপযুক্ত হয়ে গেল, মর্ত্যভূমে গতর বা মস্তিষ্ক খাটানোর আর কোনও যোগ্যতাই তার রইল না!

সে মরুক গে যাক, অবসর নিয়ে আমার কেবল দু’টি খুচরো দুশ্চিন্তা রয়েছে৷ চাকরিতে এত কাল ধরে ফি-হপ্তায় একটা করে হকের ডে-অফ বা ছুটির দিন পেয়েছি, অবসরের পরে সেটা আর থাকবে না! আরও বড় উদ্বেগের কথা, বৌ থেকে বোন হয়ে যাওয়া ভদ্রমহিলাটি আমার ওপর সম্পত্তির অধিকার আরও বেশি বেশি করে ফলাবেন এই আহ্লাদে যে মিনসের যখন চাকরি নট হয়ে গিয়েছে তখন শাড়ির আঁচল হয়ে তাঁর গায়ে লেপ্টে থাকাটাই হবে আমার একমাত্র উচিত কাজ৷

ষাটে পা দিলাম সবে, পূর্ণ তো করিনি! চট করে হিসেব করে দেখলাম, কোল পেতে বসে এ সব নিয়ে দুর্ভাবনা করার জন্য হাতে এখনও পাঁচ লাখ পঁচিশ হাজার মিনিট সময় হাতে আছে!

ইশ, লোকে বয়সের হিসেব বছর ধরে না করে যদি মিনিট ধরে ধরে করত তা হলে কী মজাটাই না হত! ষাট শুনলে যেখানে আহামরি কিছুই মনে হয় না, ৭ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার মিনিট শুনলে সেখানে প্রায় ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয়, মনে হয় তাহলে তো ধরাধামে দিব্যি অনেকটা সময় কাটিয়ে দিয়েছি, বৌ-বাচ্চা-মালিক সবাই যদি আমাকে নিয়ে এ বার ‘বোর’ হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তাদের আর দোষটা কী! আমার চারপাশে যদি কেউ এতটা সময় ধরে ঘুর ঘুর করত আমি তো সোজা তার পাছায় কষে দু’লাথই মেরে দিতাম!

ভেবেছিলাম মেনিমুখো উনষাট পার হলেই বোধহয় শরীরে-মনে নানা দুর্যোগ ঘনিয়ে আসবে৷ এমনিতেই রাতের ঘুম মাথার চুলের মতো অনেক পাতলা হয়ে গিয়েছে, অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দু’চোখের পাতা আর জোড়াই লাগবে না, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম পাকস্থলিকে জেরবার করে ছাড়বে, স্রেফ প্রকৃতিস্থতা বজায় রাখতেই ডাক্তারবাবুকে গিয়ে বলতে হবে বেশ কড়া ডোজের অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট দিন৷ আপিসে সহকর্মীদের মধ্যে যারা পছন্দ করে, মাত্র এক বছর পরে লোকটা চলে যাবে ভেবে তারা হয়ত করুণার চোখে দেখবে, যারা করে না ব্যাপিকা বিদায়ের আশু সম্ভাবনায় তাদের চোখ-মুখ চকচক করতে শুরু করবে৷ ইতি-উতি সান্ধ্য মজলিসে দেখা হলে পরিচিতজনেরা উপযাচক হয়ে ‘পোস্ট রিটারমেন্ট প্ল্যান’ নিয়ে এত সব বাতেলা শোনাতে থাকবে যে হাতাহাতিও হয়ে যেতে পারে তাদের দু’-চার পিসের সঙ্গে৷ সংক্ষেপে ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে সব কিছু!

কাল কিসনে দেখা! আজ পর্যন্ত কিন্তু এ সবের কিচ্ছুটি মালুম হচ্ছে না৷ শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে দিব্যি রাতে নাক ডাকিয়ে ঘুম হচ্ছে, সকালে হড়হড়িয়ে পেট খালাস হচ্ছে, গাড়ির কাচের ফাঁক দিয়ে বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষরতা কোনও উদ্ভিন্ন যৌবনাকে দেখলে কলজেতে বাইশি ধুকপুকানিই শুনতে পাচ্ছি, মায় ফেসবুকে কচি-কাঁচাদের সঙ্গে ফস্টি-নস্টি করতে গিয়ে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো টুপটাপ সাড়াও যে একেবারে পাচ্ছি না, তাও তো নয়! দিল তো দেখছি টগবগে বেতাজ বাতশা হয়েই আছে জি, চল্লিশটি বসন্ত আগেও ঠিক যেমনটি ছিল! কেস তো তার মানে একেবারেই জন্ডিস হয়নি দেখতে পাচ্ছি!

হবেই বা কেন? রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের সেই চরিত্রটির মতো আমার ক্ষেত্রেও যৌবন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, এমন একটা অভ্যাস যার থেকে আমার মুক্তি নেই, কোনও দিন চাইবও না৷ কেউ যদি উপযাচকের মতো জ্ঞান দিতে আসে তাকে পিকাসো শোনাবো— ইট টেকস এ লং টাইম টু গ্রো ইয়ং৷ টেলিভিশনের স্টুডিওয় কোনও অনুষ্ঠানের আগে মেক-আপ নিতে বসে যদি দেখি আমার মুখের রিংকলগুলো রি-টাচ করার চেষ্টা হচ্ছে, মেক-আপ ম্যানকে স্পষ্ট বলে দেব, তফাৎ যাও, অনেক দিন ধরে অনেক কষ্ট করে আমি এগুলো উপার্জন করেছি৷

বয়সটা তার মানে নিছকই একটা সংখ্যা৷ বিজ্ঞজনেরা বলে গিয়েছেন, ‘এজ ইজ স্ট্রিকটলি এ কেস অব মাইন্ড ওভার ম্যাটার৷ ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, ইট ডাজ নট ম্যাটার৷ বয়সটা যদি মস্তিষ্কের অন্দরে গেঁড়ে বসে থাকতে চায় তো থাক৷ আমার চ্যালেঞ্জটা হল সেটা যেন কিছুতেই আর শরীরের নীচে না নামে৷ মানুষ তো এক অর্থে ওয়াইনের মতোই৷ কেউ ভিনিগার হয়ে যায় কেউ হতে থাকে শুধুই দুর্মূল্য৷ সিনিয়র সিটিজেনের সরকারি উপাধি পাওয়ার প্রাক মুহূর্তে বিলক্ষণ এ কথা বুঝে গিয়েছি, যদি বিকল্পের কথাটা ভাবি তাহলে বয়সকে হতচ্ছেদ্দা করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না৷ জীবন কিংবা মৃত্যু দুটোর একটারও নিরাময় কীসে হয় কেউ জানে না৷ অতএব মাঝখানের বিরতিটা উপভোগ কর৷ চুটিয়ে৷ চেটে পুটে৷ সৎ ভাবে বাঁচ, অল্প খাও আর বয়স নিয়ে শুধু মিথ্যে কথা বল৷ যৌবন ধরে রাখার এটাই তো একমাত্র মন্ত্রগুপ্তি! আসার ওপর আমার হাত ছিল না, থাকবে না যাওয়ার ওপরেও৷ মাঝখানের পুরোটাই তাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে বাঁচতে চাই৷ শকট বাড়ির দরজায় এসে না দাঁড়ানো পর্যন্ত!

ওহে উনষাট কিংবা ষাট, বালাই সাট তোমাদের! মানে মানে ফোটো৷ একেবারে অসময়ে এসে পড়েছ, মেনে নিয়েছি, এটাই তো বাপু যথেষ্ট! খুব ভেবেছিলে ঘাবড়ে দেবে, লাউ ডগার মতো নুইয়ে দেবে, কই পারলে কী? তাই বলি কি, এখানে খাপ খুলতে এসো না ভায়ারা, এ যে পলাশির প্রান্তর!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *