logo

টুম্পা সোনা, চাঁদের কণা

  • August 13th, 2022
News

টুম্পা সোনা, চাঁদের কণা

টুম্পা সোনা, চাঁদের কণা

সুমন চট্টোপাধ্যায়

একেই কি সমাপতন বলে?

আজই ভাষা দিবসের সকালে আমার মোবাইলে দু’টি গানের ক্লিপ এল। একজন বলছে সে টুম্পাকে নিয়ে ব্রিগেডে যাবে আর অন্যজন যাও যাও বলে পিসিকে কাতর মিনতি করছে। হালফিলের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা, বিশেষ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির।

আমি স্বগোতোক্তি করে উঠলাম, ‘তওবা, তওবা।’

বামপন্থায় আকৃষ্ট হতে না পারলেও বাম-আন্দোলনের গানের ভক্ত আমি জন্মাবধি।লিলুয়ায় আমার ঠাকুর্দার বাড়িতে দম দিয়ে চালানো একটি গানের কল ছিল, মোটা পিন বদলে বদলে রেকর্ডের ওপর সন্তর্পণে রাখলে গান বের হতো। সামান্য কয়েকটি রেকর্ডও ছিল সেখানে, তার মধ্যে একটি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের। এ পিঠে রাণার ও পিঠে কোনও এক গাঁয়ের বঁধূ। অজস্রবার শুনেছি শৈশবে, গায়ের রোম খাড়া হয়ে উঠেছে, অর্ধশতক পরে এখনও গান দু’টির কথা ও সুর আমার কন্ঠস্থ।তারপর এসেছেন সলিল চৌধুরী, আই পি টি এ-র একের পর এক যশস্বী শিল্পী।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুই বদলায়, গাঁয়ের বধূ টুম্পার রূপ ধরেছেন। বেশ করেছেন। শুনেছি সেটা ভাইরাল হয়েছে কোভিডের চেয়েও অনেক দ্রুত গতিতে। হবেই। সমাজের যেমন রুচি বা সাংস্কৃতিক ঝোঁক গান তো তেমনই হবে।সিনেমা, সাহিত্য, শিক্ষা, উৎসব রাজনীতি, সব কিছুই এখন বটতলামুখী।

আমি পারতপক্ষে ভ্যালু জাজমেন্ট করি না, কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক সেই কূটতর্কে আমার বিশেষ রুচি নেই। আমি বিশুদ্ধবাদী নাক-সিঁটকানো পার্টিও নই। আমাদের সময়টা এর চেয়ে অনেক ভালো ছিল বলে যাঁরা আঙুলে পরমান্ন শোঁকার চেষ্টা করেন, আমি সেই দলেও নাম লেখাতে চাই না। আমি ঘটমান বর্তমানের বাস্তবতা মানি, রসাতলে যাওয়ার ভয়ে আর্তনাদ করি না। গেলে যাবে, আমি করবটা কী? টুম্পাকে নিয়ে গিয়ে আমি হয়তো ব্রিগেড সাজাবো না, কিন্তু টুম্পার এমন দাপুটে উপস্থিতি অস্বীকার করব কী করে? যা হচ্ছে সেটাই সত্য, যা হলে ভালো হতো সে-সব অলীক কল্পনা।

মেনে নাও কালীদা, নইলে অযথা মনকষ্টে মরবে। আরে রবিবাবুই তো পই পই করে বুঝিয়ে গিয়েছেন, ‘ভালো-মন্দ যাহাই ঘটুক সত্যেরে লও সহজে।’ এখন টুম্পা সত্য, পিসি সত্য, তাদের চেয়ে বড় সত্য আর কিছুই নেই। চাপ নিও না, এনজয় করো গুরু, ধনঞ্জয় হতে চেও না। আর কিছু না পারো, চুপচাপ কেবল আমাকে অনুসরণ করে যাও। বুঝতে পারবে স্রোতে ভাসার আনন্দ।

আমি ভাবছি অন্য কথা। টুম্পা ব্রিগেডে যাবে যাক, সেটা তার মৌলিক অধিকার, কিন্তু কী পোশাকে যাবে? শাড়ি? শালোয়ার-কামিজ? নাকি জিনস আর টপ? চুল বেঁধে যাবে না খুলে? ওষ্ঠে লিপস্টিক থাকবে না থাকবে না? থাকলে তার রং কী হবে? লাল না অন্যকিছু? হাতে থাকবে কোন ঝান্ডা, লাল না তেরঙা? দু’হাতে দু’টো ঝান্ডা থাকবে কী? ব্রিগেডে লাখ লাখ মানুষের মধ্যে টুম্পার অভ্যর্থনার কোনও বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে কী? মঞ্চে তুলে তাকে জনতার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়া হবে? রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দৈবাৎ চোখাচোখি হয়ে গেলে টুম্পা লাজে রাঙা হয়ে উঠবে কী? তাকে নিয়ে লেখা গানের জন্য ব্রিগেডের সমাবেশ ঐতিহাসিক প্রচার পাওয়ার পরে সভায় সেই গান বাজানো হবে কী! নাহলে টুম্পা বেচারি কতটা কষ্ট পাবে?

আরও ভাবনা আছে, ভাবছি। ব্রিগেডের সভা শেষে টুম্পা কোথায় যাবে? বাড়ি? চৌরঙ্গি পাড়ার কোনও রেস্টুরেন্ট নাকি এ জে সি বোস রোড সংলগ্ন কোনও গলিতে? ফেরার সময় কী ভাবতে ভাবতে ফিরবে টুম্পা? সমাবেশের পরে গানটা অচল হয়ে গেলে আর কেউ তাকে নম্বর দেবে না? নাকি নতুন নাম নিয়ে টুম্পা ফিরে এসে ফের বাজার কাঁপাবে?

টুম্পা সোনা, তুমি এগিয়ে চলো, আমরা তোমার সাথে আছি। ব্রিগেডে পারব না, তা বাদে সর্বত্র।

বন্দে মাতরম।

লাল সেলাম।

জয় হিন্দ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *