logo

সামনে বুদ্ধদেব (পর্ব-১)

  • August 17th, 2022
Interviews

সামনে বুদ্ধদেব (পর্ব-১)

সুমন- আপনাদের আসল প্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচন কমিশন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য- না, না, একেবারেই তা নয়।

সুমন- তাহলে আপনার দল রোজ এ রকম চেঁচামেচি করছে কেন?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - চেঁচামেচি করছে বলে তো মনে হয় না। আমার কানে তো আসেনি।

সুমন- কিছু মনে করবেন না, তাহলে এবার আপনার হিয়ারিং এইড লাগানোর সময় এসে গিয়েছে। আপনি শুনতে পারছেন না, না শুনতে চাইছেন না, কোনটা ঠিক?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - একটাও নয়।

সুমন - গতকালই আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। আপনার দলের নেতারা প্রত্যহ যে যাঁর মতো করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কামান দাগছেন। এটা আপনি অস্বীকার করছেন কেন?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছিল, তা নিয়ে প্রকাশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমাদের কী কী অসুবিধে হচ্ছে কমিশনকে আমাদের সেটা জানানো দরকার। কিন্তু চেঁচামেচি যে অর্থে আপনি বলছেন…।
সুমন - প্রতিবাদ বলছি।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - না না প্রতিবাদও নয়। যদি আমার ক্ষেত্রে বলেন তাহলে আমি কোনও কথা এখনও পর্যন্ত বলিনি, বলার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করছি না। ওরা ওদের কাজ করছে, আমরা আমাদের কাজ করছি, এটাই মূল কথা।

সুমন - তাহলে কি আমরা এটা ধরে নেব যে এ ব্যাপারে আপনার মতামত এক রকম, দলের আরএক রকম?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - না, একেবারেই না। দু-এক জন হয়তো একটু জোরে জোরে বলছেন, কিন্তু আমাকে খানিকটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয় তো, সে জন্য আমি মনে করি না যে এখনও কিছু বলার সময় এসেছে বা দরকার আছে।

সুমন - আচ্ছা এমন কিছু কি নির্বাচন কমিশন এবারে করছেন যেটা সত্যিই অতীতে কখনও হয়নি বা হওয়াটা বাঞ্ছনীয় ছিল না?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - বাঞ্চনীয় কি না বলতে পারব না। কিন্তু অতীতে যা হয়নি তা তো হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে।

সুমন - যেমন?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - যেমন ধরুন, পাঁচ দিনে নির্বাচন হচ্ছে যা আগে কখনও হয়নি। আমাদের কাছে একদিনও যা, পাঁচদিনও তা। বাইরে থেকে ফোর্স আসছে, অনেক আসছে। এটা ঠিক যে কোথাও কোথাও আইন শৃঙ্খলার একটা সমস্যা আছে, বিশেষ করে তিনটি জেলাতে, যেখানে প্রথম পর্বের নির্বাচন। সেখানে এটা আমাদের দরকার ছিল। এছাড়াও নতুন কিছু জিনিস

করছেন, আমরা দেখছি।

সুমন- দেখে কি অস্বস্তি বোধ করছেন?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - না, একেবারেই না। কেন না আমরা তো হাওয়ার ওপর দাঁড়িয়ে নেই। আমাদের একটা ভিত্তি আছে মাটির মধ্যে, মানুষের মধ্যে, সেটাই আসল।

সুমন - না, সেটা যেমন সত্যি, তেমনি ধরুন এতদিনের যে একটা অর্জিত সুনাম আপনাদের নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে, নির্বাচন কমিশনের এই আচরণের ফলে সেটা তো অনেকটা কালিমালিপ্ত হচ্ছে।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - কালিমালিপ্ত এত সহজে হয় না। মানুষ সবটাই দেখছে, আমরা কী করছি, নির্বাচন কমিশন কী করছেন। আপনি দেখবেন মানুষ কী রায় দেয়।

সুমন - না, সেটা তো মোটামুটি foregone conclusion বলেই লোকে বলছে।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - আসল কথাটা হচ্ছে, আমরা এতদিন ধরে যে কাজ করেছি, সরকার যা করেছে, পার্টি থেকে আমাদের যে রাজনৈতিক প্রচার, তার সামনে এগুলো খুব বড় ব্যাপার নয়।

সুমন - বুদ্ধবাবু একটা জিনিস আপনাকে জিজ্ঞেস করি, এটা আপনাকে ঠিক প্রশংসা করার জন্য করছি না, তিরিশ বছরের সরকার, তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ বছর আপনি চালাচ্ছেন। অথচ anti incumbency-র নামগন্ধ নেই কোথাও। গণতন্ত্রে এটা প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার। অন্য রাজ্যে যেখানে পাঁচ-দশ বছর পরেই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া ওঠে সেখানে তিরিশ বছর পরেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের বিরুদ্ধে সে ভাবে হাওয়া নেই। এটা আপনি কী ভাবে দেখেন? আমরা খুব perplexed।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - দেখুন একেবারেই anti incumbency factor নেই, এটা হয় না। আপনি যদি কিছু এলাকা ধরে দেখেন, কিছু জেলা ধরে দেখেন, কিছু issues ধরেন, দেখবেন বিরুদ্ধ হাওয়া আছে।

সুমন- সে হয়তো আঞ্চলিক স্তরে কিছু আছে। কিন্তু আমি যেটা বলতে চাইছি তা হল, তিরিশ বছর পরে তো একটা সরকারকে লোকের খেদিয়ে বের করে দেওয়া উচিত।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - এইটাই হচ্ছে আমাদের রাজ্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এটা একদম ইউনিক, যেটা অন্য কোনও রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন না। অনেক গ্রামে না হলেও অল্প কিছু গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। কিছু জেলায় রাস্তাঘাটের অবস্থা এখনও খারাপ। আমরা অনেক করেছি, কিন্তু আর্সেনিকের সমস্যাগুলো রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ব্যাপারগুলো নির্বাচনে সেকেন্ডারি হয়ে যায়। আসলে যেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না, সেটা হচ্ছে এই যে, আমাদের বামফ্রন্টের মৌলিক কর্মসূচির মধ্যে একটা ব্যাপার ছিল ভূমি সংস্কার।

আজকে বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর ভাগ জমি গরিবের হাতে, পঞ্চায়েত গরিবের হাতে। এর থেকে যে রাজনৈতিক শক্তির পুনর্বিন্যাস ঘটে গিয়েছে তার পরিবর্তন করা অত সহজ নয়। বছরের চেনা অঙ্ক তাই পশ্চিমবঙ্গে মেলে না। চট করে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াও তোলা যায় না। এইবারেই দেখুন না। ইলেকশনের দিন আপনি যদি কয়েকটা জেলা ঘুরে দেখেন, দেখবেন একটা মানুষের উৎসব। গরিব মানুষ, মাঝারি মানুষ, তাদের কাছে এটা একটা উৎসব। তারা বামফ্রন্ট ছাড়া কিছু জানে না। এটাই হচ্ছে আমাদের আসল শক্তি।

সুমন- কিন্তু এর সঙ্গে তো এটাও ঠিক যে কৃষিতে বিশেষ করে উৎপাদনশীলতায় এক ধরনের stagnation এসে গিয়েছে। ১৯৯২-৯৩ সাল থেকেই।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - এখন নতুন ধরনের সমস্যা এসেছে। আপনি ঠিক বলেছেন food grains-এ স্বয়ংসম্পূর্ণতায় পৌঁছতে পেরেছি। আমাদের রাজ্যের যা প্রয়োজন সেই পরিমাণ ধান হচ্ছে। এরপরে যদি বোরো উঠে আসে ঠিক মতো। এই একটু আগেই শুনলাম বর্ধমানে বৃষ্টি হয়েছে, তাহলে ১৭০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান হবে এ বার। এখন সমস্যা হচ্ছে, আপনি যেটা বললেন stagnation এসে গিয়েছে, ঠিক তা নয়, আমাদের এখন crop diversification-এ যেতে হবে। ধান ছাড়াও তৈল বীজ, ভোজ্য আর ডাল এসবের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর একটা emerging area যেটা হচ্ছে শাক-সব্জি, ফুল, ফল। এটা হয়েছে, মানে উৎপাদনটা হচ্ছে কিন্তু বাজারজাত করা, কোল্ড স্টোরেজ, কোল্ড চেন, এই জায়গাটায় আমাদের ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। এটা না করতে পারায় আমাদের একটা অংশের সব্জি মাঠে মারা যাচ্ছে। সেই জায়গাটাই হচ্ছে আমাদের ভাবনা। অর্থাৎ এক কথায় বললে, আপনি যেটা বললেন, কৃষিতে সাফল্য এসেছে, উৎপাদন বাড়ছে কিন্তু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে দুটো আমি বললাম, এক crop diversification, আমাদের তৈলবীজ করতে হবে, সর্ষের তেল বলুন, সূর্যমূখী তেল বলুন। এইটা একটা দিক, ডাল উৎপাদন আর একটা দিক। আর সব্জিতে বিশাল সাফল্য ধরে রাখতে গেলে আশু প্রয়োজন বাজার তৈরি করা। এর জন্য একটা একটা পরিকাঠামো তৈরি করা।

সুমন - কিন্তু বুদ্ধবাবু মাঝখানে যেমন contract farming এর কথা শোনা যেত, পেপসি আসতে চেয়েছিল, সে নিয়ে কিন্তু

আপনার সরকার বিশেষ কিছু বলেন না, আপনিও বলা বন্ধ করে দিয়েছেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - পেপসি আসতে চেয়েছিল কোথায়?

সুমন - মানে আলুতে।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - Contract farming আমরা করতে চাই না কারণ ওরা তার মধ্যে কিছু conditions রেখেছিল। আমার কথা হচ্ছে তুমি কো–অপারেটিভ করে ওদের থেকে কিনে নাও। কিন্তু তুমি কিছু ইনপুট আগে দেবে, তারপর তাকে একটা বাঁধনে আটকে দেবে, আমরা সেটা চাই না। পেপসির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাটা কিন্তু ভালোই। ওরা প্রায় ৩৭টা কো–অপারেটিভের কাছ থেকে আলু নেয়। আগে ওরা বলত, পাঞ্জাবের আলু যে কোয়ালিটির সেইটা বেশি ভালো। এ বার আমাদের চাষিদের কাছে ওরা বলেছিল কোন ধরনের বীজ ব্যবহার করলে ভালো হবে। এবারেই ওরা প্রথম বলল যে, ‘খুব ভালো আলু পেয়েছি আমরা, পাঞ্জাবের থেকেও ভালো আলু পেয়েছি।’ এই মডেলে আমার আপত্তি নেই, শর্ত চাপানো হলে তাতে আপত্তি।

সুমন - কিন্তু এই শর্ত তো অন্যান্য রাজ্যে ওরা চাপাচ্ছে, আর লোকে তা মেনেও নিচ্ছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গ কি competitive advantage হারাবে না?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - Competitive advantage টা পাবে, আমরা কোনও মতেই আমাদের জমির ওনারশিপটা চেঞ্জ করতে পারব না। সে যদি ইনপুটে কিছু contract দেয় – হয়তো উন্নতমানের বীজ দিল, কি উন্নতমানের কিছু জৈব সার ইত্যাদি দিল, সে ক্ষেত্রে হয়তো আমরা মানতে পারি। কিন্তু contract এ গেলেই একটা জমি নিয়ে টান পড়ার সম্ভাবনা আছে, সেটা মস্ত বড় বিপদ। আমরা ওই বিপদটায় পড়তে চাই না।
সুমন - ধরুন একদিকে রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা রক্ষার দায় আপনার, আর এক দিকে অর্থনৈতিক উন্নতির এই যে চাহিদা, এই টানাপড়েনে অর্থনীতি তো রাজনীতির কাছে হার মেনে যাচ্ছে।

বুদ্ধদেব - না, অর্থনীতির নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে, আপনি জানেন। এই অর্থনৈতিক নিয়মে, একদল মনে করছেন যে ল্যান্ড ওনারশিপ এসব দরকার নেই, কিন্তু আমাদের কাছে ওইটাই হচ্ছে শক্তি। শুধু রাজনৈতিক শক্তি নয়, এই যে সাফল্য এসেছে উৎপাদনে, এটা কিন্তু ছোট জমির মালিকানার সাফল্যেই এসেছে। পাঞ্জাবের মতো গ্রিন রেভলিউশন আমাদের মডেল না, আমাদের মডেল হচ্ছে, ছোট কৃষকদের ছোট জমির উৎপাদনশীলতা বাড়ানো।

সুমন - কত দিন সম্ভব, ছোট জমির ওপর সেটা করা, উইদাউট মেকানাইজেশন?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - মেকানাইজেশনও হচ্ছে আমাদের মতো করে। মনে করুন দশজন, বারো জন, পনেরো জন, even পঁচিশ জন মিলে, ট্র্যাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার কিনে ব্যবহার করা শুরু করল। এটা বর্ধমানে শুরু হয়েছে, তারা মাঠের চাষের জন্য ট্র্যাক্টর বা পাওয়ার টিলার এগুলো ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে হারভেস্টিং মেশিন আসবে। তখন তারা করবেন কী, পনেরো কুড়িটি পরিবার মিলে সেটা চালু করবেন।
সুমন চট্টোপাধ্যায় - কো-অপারেটিভ?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - হ্যাঁ, কো–অপারেটিভ ফর্ম করবে। এটা সেচের ক্ষেত্রে হতে পারে, সিডস-এর ক্ষেত্রে হতে পারে, ট্র্যাক্টরের মতো যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে হতে পারে। আমরা মেকানাইজেশন রাতারাতি করতে গেলে আবার এমপ্লয়মেন্টের সমস্যা তৈরি হয়ে যাবে। সেটা বুঝে বুঝে আস্তে আস্তে এগোতে হবে। কিন্তু উন্নতমানের চাষের জন্য খানিকটা মেকানাইজেশন

দরকার।

সুমন- তাহলে ইউ আর বাই অ্যান্ড লার্জ স্যাটিসফায়েড উইথ দ্য প্রগ্রেস রিপোর্ট ইন এগ্রিকালচার?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - আমি বলব এই প্রক্রিয়াটা এখনও পর্যন্ত সাফল্য ধরে রেখেছে। সে জন্য এর মধ্যে আমাদের হঠাৎ কোনও পরিবর্তন করতে যাওয়াটা ঝুঁকির। সবাই নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেটা বুঝতে পারছেন সেটাই করছেন। আমরা যেটা চাইছি সেটা crop diversification। নদিয়া জেলার একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য, ধানের জেলা, পাটের জেলা, আবার আউশও হয় ওখানে। কিন্তু সেখানে ব্যাপক ভাবে ডাইভারসিফিকেশন শুরু হয়েছে। কলা, ফুল, সব্জি উৎপাদন হচ্ছে প্রচুর। নদীয়া জেলায় সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্য আছে।

সুমন - এটা কি নিজেদের তাগিদে করেছে?

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য - হ্যাঁ নিজেদের অভিজ্ঞতায়, নিজেদের বুদ্ধিতে করেছে। আমি বলব না যে সবটাই আমাদের সরকার করেছে, সবটাই সরকারের কৃতিত্ব। এটা করেছে কিন্তু তারাই। তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতায়। আজকে মনে করুন যদি পশ্চিমবাংলায় গোলাপ চাষ করে তিনগুণ দাম পায়, আমি তো নেদারল্যান্ডস মার্কেট ঘুরে দেখেছি। কেন গিয়েছি, কারণ সেই কৃষক তিনগুণ দাম পাচ্ছে। মিডল ইস্টে রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে, দাম পাচ্ছে। তেমনি মালদার আম যদি আমি জাপানে নিয়ে যেতে পারি তবে বিরাট দাম পাব। (চলবে)

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *