logo

একদিন যদি খেলা থেমে যায়

  • August 13th, 2022
Arts and Literature

একদিন যদি খেলা থেমে যায়

আঁধার ভেবো না, কখনও মেঘের থামাকে
নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় 

ঘড়ি চলছে, কিন্তু সময়টা কোথাও যেন থেমে! মাঠ খোলা, যেন খেলা থেমে গেছে। একটা থমকে যাওয়া সময়ে, নিজের টুকরো টুকরো কবিতাই যেন ভেসে এলো। আর এলো সেইসব কবিতার মুহূর্তরা। একটা গল্প, একটা জীবন, একটা খেলা, একটা সম্পর্ক, একটা স্বপ্ন, একটা রাস্তা থেমে যাবার পরেও আবার ঘুরে দাঁড়ানোর কবিতা। একেবারে হঠাৎ, যেন হাওয়ায় ভেসে তারা এসেছিল। তারপর মিলিয়ে গিয়েছে হাওয়ায়।


প্রাতিষ্ঠানিক স্বেচ্ছাচারে আমার জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমেছে। চেনা মানুষও মুখ ফিরিয়ে নেয়। আপন অধিকার রক্ষার আবেদন নিয়ে দরজায় দরজায় ঘুরে ক্লান্ত, এক প্রাজ্ঞ আধিকারিকের ঘরে ঢুকেছি। তাঁর নিস্তরঙ্গ, দীর্ঘ কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের মাত্র দিন কয়েক আগে আমার দুরাবস্থায় দৃশ্যতই তিনি বিব্রত। বললেন, ‘জীবনটা নষ্ট করলে শুধু শুধু।’ তাই কি? আমি যেন একটা কবিতা পেয়ে গেলাম।
নষ্ট হয় না জীবন,
শুধু কষ্ট হয়। 


হাল ছেড়ে দিয়েছে মালী। বসছিলাম রোজই, বাগানে একটা প্রিয়, মরা গাছের সামনে। আশা, চোখের উত্তাপে একদিন যদি নতুন একটা পাতা দেখা যায় আবার। ভেবেছিলাম মৃত সম্পর্কের গোড়ায় কিছু ভালবাসা ঢেলে দিলে মরা ডালেও পাতা গজাবে আবার। 
চোখ রেখেছি মরা ডালে,
যদি একটা পাতা গজায় 
রোজ তাকালে! 


বসেছিলাম আলো-খেলা-করা খোলা আকাশের নীচে। এত আলো তবু যেন চারপাশে ঘন অন্ধকার। এই আঁধার তবে কী আমার মনেই? ফিরে এলাম। আকাশের নীচ থেকে চার দেওয়ালের ভিতর। বিকেলের আলো পড়ে আসার লগ্নে বাড়ির ভিতর দম বন্ধ করা সময়। জেগে আছে ছোট্ট একটা জানলা। আর তার ভিতরেই এবার যেন ফিরে পাওয়া অনন্ত সেই আকাশ।
জানলা যত ছোট 
আকাশ তত বড়।


এক একটা টান থাকে যার থেকে বেরিয়ে আসাই ভালো। কিন্তু কিছু একটা ধরে রেখেছে পিছনেই। জড়াতে গেলে যেমন লাগে প্রবল একটা টান, বাঁধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে ঠিক তেমনই একটা ধাক্কা।
বেরোতে একটা ধাক্কা লাগে, 
ঢুকতে একটা টান। 

৫ 
একবার সব বুঝেও যেন চাইছিলাম একটা মিথ্যেকেই। কেন না মিথ্যে হলেই সেটা হত আনন্দের। সত্যি এসে সামনে দাঁড়ালে স্বপ্নগুলো হয়ে উঠল দুঃখ।
মিথ্যে বেশি আনন্দ দেয়,
সত্যি কথা—দুঃখ। 

৬ 
এক জাপানি কবি একবার লিখেছিলেন, ‘একা হতে চাই/একা হলে একা একা লাগে।’ অপার নিঃসঙ্গতার ভিতর বসে একদিন মনে হয়েছিল, ওই তো রাস্তা। আবার যাই, হাঁটি।
সবাই নিজেকে 
কিছুটা সময় একা ভাবে,
যার পর, সে এগিয়ে যাবে! 


পুরাতন যেন আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আমাকে। ভাবছিলাম আগামীর কথাও। অতীত আর আগামী, আগামী আর অতীত— বিধ্বংসী এক অস্থিরতা গ্রাস করেছিল আমাকে। এলো এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর উপদেশমালা। অতীত ভেবে কী লাভ? কী হতে পারে, ভেবে কী লাভ? ভাবো, এখন তুমি শুধুই যেন এখানে। বুকের থেকে নেমে গেল কী নিদারুণ পাথর। 
না সামনে, না কিছু আর পিছনে  
যা কিছু সব এখন এবং এখানে।


ফুল ঝরে যায়, পাতা ঝরে যায়। বসন্ত চলে গেলে মনের বারান্দায় থেকে যায় আদরের দাগ, পলাতক জীবনের ছায়া। এই তো নিয়ম। 
বসন্ত আসে শুধু চলে যাবে বলে 
ভালবাসা আসে 
কিছু বসন্তে থেকে যাবে বলে! 


একটা কিছু হারিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, কোথাও একটা আছে। আর যা দেখলাম চোখে, মনে হলো, হারাবে বলেই যেন তারা এসেছে খুব কাছে।   
কোথাও আছে, কোথাও আছে 
এখন যা মনে হচ্ছে হারিয়েছে,
কোথাও নেই, কোথাও নেই,
এখন যা মনে হচ্ছে আছে। 

১০
হঠাৎ নেমেছে অন্ধকার। ভেবেছি প্রলয় দাঁড়িয়ে দরজায়। দমকা বাতাসে মেঘ সরে আবার রোদ আমার নিঃসঙ্গ বাগানে।  
আঁধার ভেবো না,
কখনও মেঘের থামাকে। 

১১
সাজাচ্ছিলাম অনেক কিছুই এইটুকু না বুঝে। 
বাড়তি কিছুই বিষ 
পারলে ফেলে দিস! 

১২ 
কত রাস্তায় হাঁটাই হল না আর। যেতে যে চেয়েছি, তবু এইটুকু বলা থাক।  
যেখানে রাস্তা নেই, 
যাওয়ার ইচ্ছে শুধু থাক।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *