- August 13th, 2022
একদিনে বিশ লাখ!
সুমন চট্টোপাধ্যায়
প্যানডেমিক নিয়ে প্যানপ্যানানির গপ্পো পড়তে আর ভালো লাগে না। রোজ রাতে ঘুমোনোর আগে প্রতিজ্ঞা করি, কাল থেকে আর পড়ব না। রাখতে পারি না, ব্যাপারটা অনেকটা সিগারেট ছাড়ার প্রতিজ্ঞার মতো হয়ে যায়। জার্সি চাপিয়ে ময়দানে হয়তো খেলছি না, কিন্তু আদতে আমি তো আপাদমস্তক খবরওয়ালাই। গত দু’বছর যাবৎ গোটা দুনিয়াটাকে উথাল পাথাল করে দিচ্ছে যে ভাইরাস-ত্রাস, তাকে উপেক্ষা করি কী করে? যত পড়ি সমানুপাতিক হারে বিভ্রান্ত হই, সাদা-কালো-বাদামি সব গাত্রবর্ণের বিশেষজ্ঞ আর বিজ্ঞানীদের অজস্র পরস্পর বিরোধী মূল্যায়ন পড়ার পরেই মাথার ভিতরটা ভোঁ ভোঁ করতে থাকে, মাঝে মধ্যে পেটটাও গুড়গুড় করে ওঠে। কনফিউশন গেটস কনফাউন্ডেড। পদে পদে।
ওমিক্রন-কিসসার কথাই ধরুন। দু’দিন আগে পড়লাম পণ্ডিতেরা অভয় দিচ্ছেন এই ভাইরাসটি নাকি মনুষ্য প্রজাতিকে বাঁচানোর জন্য স্বয়ং ঈশ্বরের উপহার। এই ভাইরাস রথের মাঠে হারিয়ে যাওয়া ইনফ্লুয়েঞ্জার যমজ ভাই, বড় জোর চার-পাঁচটি দিন শরীরে নাড়াচাড়া করে সুবোধ বালকের মতো নিজেই অদৃশ্য হয়ে যাবে। ফুসফুস আক্রান্ত হবে না তাই শ্বাসকষ্টের কেস নেই, অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়িতে মজুত রাখার প্রয়োজন নেই, অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানোর জন্য হাসপাতালেও ফোন করতে হবে না। লাল-নীল-সবুজ কোনও ভলান্টিয়ার ডাকার প্রয়োজন নেই। অতি-সুভদ্র ভাইরাস এই ওমিক্রন তাই প্রণম্য।
এই ব্যাখ্যা যে অতিকথন নয় ইতিমধ্যেই তা প্রমাণিত। প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় আমাদের যেমন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা হয়েছিল, অসহায় আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছিল আকাশ বাতাস, একটার পর একটা গঙ্গাপ্রাপ্ত বেওয়ারিশ লাশ ভেসে আসছিল গঙ্গারই পাড়ে, এবার সেই বীভৎসা নেই। হু হু করে বাড়ছে সংক্রামিতের সংখ্যা, যেন বান ডেকেছে ভরা কোটালের, তবু হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার নেই, মৃতের সংখ্যাও নগন্য। মৃত্যুভয় প্রায় নেই বলে মানুষ আগের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে।
ভুবনায়নের উন্মেষ দেখে ফ্রান্সিস ফুকিয়ামা যেমন ‘এন্ড অব হিস্ট্রি’-র নিদান দিয়েছিলেন, ওমিক্রনের আগমনে তেমনি অনেক বিশেষজ্ঞ অতিমারির অবসানের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। এঁদের বক্তব্য, একবার ওমিক্রন হলে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা এত বেড়ে যাবে যে তারপরে কোনও ভাইরাসই আর সুবিধে করে উঠতে পারবে না। হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে মানুষের সঙ্গে লড়াইয়ে ভাইরাসের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী যার অর্থ স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাবর্তন।
ওমিক্রন-মাহাত্ম্যের এই কাহিনি পড়ে মেজাজটা সবে একটু ফুরফুরে হয়ে উঠেছে, আর একটি খবরে পড়লাম ফ্রান্সে ভাইরাস বাবাজীবনের আর এক নতুন অবতারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যার পোশাকি নাম আই এইচ ইউ। এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২ জনের দেহে এই নতুন ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে যারা সবাই সম্প্রতি ক্যামেরুন গিয়েছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে অন্য একটি বিষয়। এই ভাইরাসটি এ পর্যন্ত ৪৬ বার মিউটেট করেছে, হঠাৎ সে শ্রীমান ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে না সেই গ্যারান্টি কোথায়? তার মানে ওমিক্রনেই ভাইরাসের ইতি এখনই এতটা আশাবাদী হওয়া মূর্খামি।
ওয়ার্লড হেল্থ অর্গানাইজেশনেই একদল বিজ্ঞানী আছেন যাঁরা ওমিক্রন সংক্রমনের ব্যাপ্তি নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত। অতীতের ঢেউগুলো প্রাণঘাতী হলেও স্ফীতিতে ওমিক্রনের কাছে দুগ্ধপোষ্য শিশু। দুনিয়া জুড়ে এই সংক্রমন প্রায় যেন আলোর গতিতে ছড়াচ্ছে, আজ দশ হলে কালই হয়ে যাচ্ছে পাঁচশ। আমেরিকায় যেমন একই দিনে সংক্রামিত হয়েছেন এক লাখ মানুষ। কোন বিন্দুতে গিয়ে এই সুনামি থামবে কেউ জানে না। আর সেখানেই বিজ্ঞানীর দুশ্চিন্তা। বেশি করে সংক্রমন ছড়ানো মানে বেশি মানুষ সংক্রামিত হওয়া, বেশি মানুষ সংক্রামিত হলে ভাইরাসের ভোল বদলের সম্ভাবনাও ততটাই বেশি।
আমি হলাম ইতিহাসে পাতিহাস, ভাইরাস-রহস্য ভেদের নানাবিধ ব্যাখ্যার বেশিরভাগটা আমার মাথার ওপর দিয়ে যায়, যেটুকু মরমে প্রবেশ করে সেটা যথেষ্ট অস্বস্তির।এই যেমন গতকালই এন ডি টি ভি-তে এমন একটা খবর দেখলাম যা সত্য হলে সমূহ সর্বনাশ। ওই রিপোর্টের মূল কথাটি হল, ভারতবর্ষে অচিরেই দৈনিক সংক্রমনের সংখ্যা হবে ১৬ থেকে ২০ লাখ। সংক্রামিত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে দু’জনেরও যদি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে প্রয়োজন হবে ৬০ হাজার বেডের। এত সংখ্যক বেড আমাদের দেশেই নেই। দিনে ২০ লাখ মানুষ কোভিড পজিটিভ হচ্ছেন কল্পনা করেই আমার মাথাটা ঘুরতে শুরু করল। একটু সুস্থ বোধ করলে আবার ফিরব।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

