- August 13th, 2022
মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ…
নিরানন্দর জার্নাল (১৪)
মৃত্যুরে করিবে তুচ্ছ…
একে মা মনসা, তায় ধুনোর গন্ধ!
করোনায় চিৎপাত, সেটাই যথেষ্ট নয়। আমাদের টলমলে অস্তিত্বকে আরও বেসামাল করে দিতে প্রাণহন্তা ভাইরাসের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। তার রুদ্রবেশের ভ্রুকুটি শোনা যাচ্ছে, উপকূলবর্তী জেলাগুলোয় সামরিক তৎপরতায় চলছে মানুষের সুরক্ষার প্রাণপন উদ্যোগ। কানে গুজব আসছে ‘ইয়াস’ নাকি আমফানের মতোই প্রলয়ঙ্করী হতে চলেছে, কেউ বলছে তার চেয়েও বেশি।
আমার কাছে বন্ধুর হোয়াটস অ্যাপ বার্তা এসেছে সম্ভাব্য মহাপ্রলয়কে মাথায় রেখে গৃহে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে। সাত দিনের মতো পানীয় জল, আনাজ, তৈজস ও ওষুধপত্র,মোমবাতি অথবা ইমার্জেন্সি লাইট প্রস্তুত রাখা হাতের কাছে, বাড়িতে কাচের জানালা থাকলে তাকে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বেঁধে তার ওপর মাস্কিং টেপ লাগিয়ে দাও, গাড়ি থাকলে ছাদের তলায় উঁচু জায়গায় পার্ক করে রাখা, প্রস্তুত থাক টানা কয়েক দিন নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে থাকার।
আরে বাবা বাড়িতে আলো জ্বললেই কি জীবনটা আলোকিত হয়? সেই কবে থেকে অন্ধকারের যাত্রী হয়ে আছি আমরা, মরাকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে কোনও লাভ আছে কী? এ মতো ভয়ঙ্কর পূর্বাভাস যদি ভগবান না করুন সত্যিই মিলে যায় আমরা ফের আমফান-পরবর্তী করুণ, গায়ে কাঁটা দেওয়া ছবিটা ফিরে আসতে দেখব। বলব, ‘হে ভৈরব, শক্তি দাও, ভক্তপানে চাহ’। চাইবেন কি চাইবেন না, সেটা তাঁর ব্যাপার।
ভয়াল সঙ্কটের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে আরও অনেকের মতো আমিও একটু নিশ্চিন্ত বোধ করার দিশা ক্রমাগত খুঁজে চলেছি খ্যাপার মতো। পরশপাথর খুঁজে হয়ত পাইনি। তবে একটি সহজসাধ্য ক্রিয়ার সন্ধান পেয়েছি যার অনুশীলন মোটেই কঠিন ব্যাপার নয়। আমার তো মনে হয় এই সুপ্রাচীন তত্ত্বটি আজকের দিনে খুবই লাগসই।
Premeditatio Malorum!
খটমট লাতিন শব্দ যার সহজ অর্থ হল, ভবিষ্যতে কী কী অঘটন আমার জন্য অপেক্ষা করছে, সবচেয়ে খারাপ কী ঘটতে পারে তা আগাম আন্দাজ করে প্রতিদিন কিছুটা সময় তাতে মনোনিবেশ করা। হয় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে নতুবা রাতে শুতে যাওয়ার আগে। এতে লাভ হলো, বিপদ যখন আসবে তখন তাকে আর অপ্রত্যাশিত মনে হবে না, বিপদের সঙ্গে আপনি টক্কর দিতে পারবেন সমানে সমানে। দুনিয়া মত্ত হয়ে আছে ‘পজিটিভিটি’ নিয়ে, চলছে অনবরত চর্চা, হাজার হাজার বই লেখা হচ্ছে, অথচ এই ‘নেগেটিভ ভিসুয়ালাইজেশন’ নিয়ে কারও কোনও হেলদোলই নেই। এতটা অবজ্ঞা বা অবহেলা এর প্রাপ্য নয়।
দ্বি-সহস্র বছর আগে স্টোয়িক দার্শনিকেরা এই তত্ত্বের জন্ম দিয়েছিলেন। মার্কাস অরেলাস, এপিকটেটাস দৈনিক এর অনুশীলন করতেন, মহা-বিপদের আগাম চর্চার প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা নিয়ে লেখেলেখিও করেছেন। তবে স্টোয়িক দার্শনিকদের মধ্যে সেনেকাই ছিলেন এর সবচেয়ে সোচ্চার প্রবক্তা। তিনি রোমান সম্রাট নিরোর উপদেষ্টা ছিলেন, সেনেটের সদস্য ছিলেন আবার দার্শনিকও ছিলেন। প্রতি মাসে কয়েকটা দিন তিনি রোমের বিলাসী জীবন ত্যাগ করে গরিবের কুটিরে গিয়ে থাকতেন ভবিষ্যতের দুর্যোগের মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত করে তোলার জন্য। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘পছন্দের দারিদ্র্য’।
বিপদের আগাম আবাহন জরুরি কেন সেনেকা তার চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘What is often unlooked for is more crushing in its effect and unexpectedness adds to the weight of a disaster.’ সে জন্য যাতে কোনও কিছুই আমাদের বিস্মিত করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কর্তব্য হল জীবনের প্রতিটি বাঁকে সম্ভাব্য সব রকমের বিপর্যয় অথবা বিপদের কথা মাথায় রাখা, কেবলই বর্তমানে যা ঘটে চলেছে তার চিন্তা করা নয়। সেনেকার সুপারিশ, মনে মনে তাই সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক সম্ভাবনাগুলি মাথায় নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করুন—জাহাজডুবি, যুদ্ধ, অত্যাচার, নির্বাসন। সেনেকার তালিকায় অনুপস্থিত কেবল মহামারি।
বিষয়টি আমার মনে ধরেছে। আমাদের চারপাশে যা ঘটে চলেছে সত্যিই তার ওপরে আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু সেই সব ঘটনায় আমরা কী ভাবে সাড়া দেব সেই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তো সত্যিই আমাদের আছে। গৃহবন্দি জীবনে, সময় কাটানোটাই যেখানে কঠিন সমস্যা সেখানে একটা নতুন পরীক্ষা করে দেখতে ক্ষতি কী?
আরম্ভ করা যাক Premeditatio Malorum


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

