- August 13th, 2022
একদিন যদি খেলা থেমে যায়
ক্রীড়া অতি বিষম বস্তু
রাহুল পুরকায়স্থ
আমার ছোট দাদু বলতেন, ‘ক্রীড়া অতি ভীষণ বস্তু। খুব সাবধানে সামলাতে হয়। খেলতে খেলতে ক্রীড়নক হয়ে গেলেই বরাত বাতিল।'
ছোট দাদু, ভূপেশ পুরকায়স্থ, বাবার ছোট কাকা। আমৃত্যু নিজেকে বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেন। একসময় মাদাম কুরি ও মেরী কুরির কাছে গবেষণা করতে বিলেতে পাড়ি জমান। কিন্তু না, গবেষণা শেষ করার আগেই কলকাতায় প্রত্যাবর্তন। মেঘনাদ সাহা তাঁর এই প্রিয় ছাত্রটিকে ফিরিয়ে আনেন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ছাত্র শিক্ষার কাজে। আমি সবে মাধ্যমিক পেরিয়েছি, সেই সময়ে তাঁর সঙ্গে আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। তখন তাঁর বয়স ৭৪/৭৫। প্রায় সারাদিন বই পড়তেন। মূলত সত্যেন বোস, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, প্রেমেন্দ্র মিত্র আর অচিন্ত্য কুমার। বলতেন, ‘যতই বিজ্ঞান করো আর বাণিজ্য করো, সাহিত্য না করলে কাঁচকলা।' বুড়ো আঙুল দেখাতেন! আর দিনে ২৫ থেকে ৩০ বান্ডিল বিড়ি টানতেন। বই পড়তে পড়তে বা কথা বলতে বলতে একটার পর একটা বিড়িতে দুই বড়জোর তিন টান দিয়ে বড় মাটির হাঁড়িতে ফেলতেন। এই স্বল্প দগ্ধ বিড়ি থেকেই শুরু হয়েছিল আমাদের অন্য এক খেলা। বিড়ি-বিড়ি খেলা। দাদু মাঝে মাঝেই বলতেন, 'খেলতে এসেছো, খেলে যাও। হাত-পা দু-একবার ভাঙো, শুধু মগজ ফাটিয়ো না।' সেই সময়ে দাদুর বন্ধু ছিলেন শিল্পী দেবব্রত মুখোপাধ্যায়।
প্রাক মাধ্যমিক জীবনের কথা যদি ছেড়েও দিই, পরবর্তীতে দাদুর এই গুহ্য মন্ত্রে নিজেকে একজন গুপ্ত সমর্পণকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। খেলতে খেলতেই তো বেলা গেল। বেলা বয়ে গেল। এ খেলায় অবশ্য পক্ষ, প্রতিপক্ষ দুই-ই আমি। আমি তেকাঠিতে গোল মারি আবার আমিই গোল আটকাই। এ খেলায় আমি রেফারি, লাইনস্ ম্যানও আমি, দর্শকও।
এই যে আমি সামান্য লেখালিখির চেষ্টা করি সেও তো এক ধরনের খেলাই। লেখা লেখা খেলা। কবিতা কবিতা খেলা। কেউ তাস খেলেন, কেউ দাবা খেলেন, কেউ কেউ খোখো, কাবাডি, ফুটবল, ক্রিকেট, দাড়িয়াবান্ধা। আমি কবিতা কবিতা খেলি। এক সময় টেলিভিশনে 'মজার খেলা কবিতায়' বলে একটি অনুষ্ঠান হত। কবিতা নিয়ে যে মজা করা যায় সেই প্রথম জানলাম। এ রকম কত খেলাই তো খেলে চলেছি দিনরাত। জীবিকা-জীবিকা খেলা, বন্ধু-বন্ধু খেলা, শত্রু-শত্রু খেলা, প্রেম-প্র্রেম খেলা, খিদে-খিদে খেলা, দেহ-দেহ খেলা, হত্যা-হত্যা খেলা। হ্যাঁ, প্রতিটি মৃত্যুকেই আমি হত্যারূপে ভাবি। খেলা ভাঙার খেলা। 'খেলারাম, খেলে যা'। সৈয়দ সামসুল হক। পেলে পড়বেন। খেলতে খেলতে বারকয়েক হাত-পা ভাঙলো, মগজও মনে হয় দু-একবার। কিন্তু একদিন যদি খেলা থেমে যায় !
ধরা যাক, থেমে যাওয়ার বছর কুড়ি পরে। ধরা যাক, আমার পুত্রের সঙ্গে কৃতান্তকাকুর দেখা। হঠাৎ দেখা। কৃতান্তকাকু বাবার নিকট বন্ধু। ফিল্ম ক্লাব করতেন। বছর পঁচিশ আগে গত। ধরা যাক, ওদের দেখা সরলা মেমোরিয়াল হলে। সুদর্শন কৃতান্তকাকু আমার পুত্রকে দেখে এগিয়ে এলেন।
'আশমান না?'
'হ্যাঁ, আপনি?'
'আমাকে চিনবে না। তোমার ছবি আমি দেখেছি তোমার বাবার কাছে। তা তোমার বাবার খবর কী, খেলছে কেমন?'
এ বার আশমানের অবাক হবার পালা। মনে মনে ভাবছে, এই ভদ্রলোকও তবে আমার বাবার খেলা জানেন!


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

