- August 23rd, 2022
যত বড় চোর, তত বেশি ভোট
সোমনাথ মিত্র
চোর মানেই ধুরন্ধর। বুদ্ধিমান। কৌশলী। আত্মবিশ্বাসী। দূরদর্শী। সর্বোপরি বেপরোয়া। যাঁর ঝুলিতে এত গুণ, তাঁকে ঠেকায় কে? আর তিনি যদি হন নেতা। তাহলে আরও দুটি গুণ সংযোজন করা যায়। সাবলীলভাবে মিথ্যে বলা ও ভুয়ো নৈতিকতার বুলি ঠোঁটস্থ করা! তাহলেই তাঁকে আদর্শ একজন রাজনৈতিক নেতা বলা যায়।
এমন নেতা হওয়া সত্যি সাধনার বিষয়। প্রতিদিন নিজেকে কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে হয়। মিথ্যে কথাকে এমন ভাবে রপ্ত করতে হয়, আল্-জিহ্বা যাতে অল্প টোকাতেই খসে না পড়ে। ধমনীর মধ্যে নীতিহীনতার স্রোত এমন ভাবে বইয়ে দিতে হয়, বহির্জগতে সেই দ্যুতি যেন ছিটকে বেরিয়ে আসে। মুখ খুললেই টুপটাপ যেন ঝরে পড়তে থাকে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজির বাণী। মনে হবে এসব মনীষীদের আদর্শে যেন সিক্ত তিনি, আসলে কিন্তু ফাঁকা কলসি! তাঁরা ফাঁকা কলসিই হতে চান। না হলে আওয়াজ হবে কী করে? আর আমাদের কর্ণপটাহে প্রবেশ করবেই বা কী করে?
নেতার আর একটি বড় গুণ থাকে। নিজেকে বিক্রি করার ব্যগ্রতা। যিনি যত বেশি নির্লজ্জের মতো নিজেকে বিক্রি করতে পারে, তিনি তত বড় নেতা। নিজের নামে স্টেডিয়াম, নিজের নামে মন্দির, নিজের নামে মূর্তি, নিজেকে সিনেমায় তুলে ধরা, নিজেকে পুরস্কৃত করা- এ সবই বড় নেতা হওয়ার আদিম কর্মসূচি। বাইপাস ধরে গেলে শহর দূষণ করা পেল্লাই পেল্লাই সব পোস্টার, তাতে মেকি হাসি নিয়ে হাতজোড় করে অভিবাদন জানাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। না চাইলেও আপনাকে দেখতে হবে। না ভাবলেও আপনাকে ভাবতে হবে। এভাবেই ধীরে ধীরে আপনার অবচেতন মনে জায়গা করে নেন নেতা।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে নিজেকে তুলে ধরা আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। বিনে পয়সায় প্রতিদিন মনীষীদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে নিজের ছবি সাঁটিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। আসলে এ এক অভ্যেস। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই নিজেকে ফুটিয়ে তোলা, এ কম বড় কথা নয়। আমরাই ওই ছবির তলায় অজস্র কমেন্টের ঢেউ তুলে দিই। মনীষীর পাশে নেতা থাকলে, নেতাকেও মনীষী-মনীষী লাগতে শুরু করে আমাদের। এটাই তাঁর সার্থকতা। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে এই কাজটি করতে ভোলেন না নেতা।
এ সব গুণ যখন নেতার মধ্যে কিলবিল করে, তখন চুরি খুব একটা প্রাসঙ্গিক থাকে না। চোর নেতা সোনার আংটি, তার আবার ব্যাঁকা-র মতো। চৌর্যবৃত্তি এবং নেতৃত্ব বরং একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে । এই গুণটিই তখন তাঁর পোর্টফোলিও। চুরির ভার যাঁর যত বেশি, তিনিই তত বড় নেতা। নেতাদের চুরির আর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। চুরিকে শুধু দুর্নীতির বন্ধনীতে রাখলেই হবে না। প্রতিদিন আরও অনেক কিছু চুরি করেন নেতারা। ৫০০ টাকা দিয়ে মানুষের কর্মক্ষমতা চুরি করেন। ভাতা দিয়ে বেকারদের চাকরি চুরি করেন। প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের ভরসা চুরি করেন। ধর্মের হিড়িক তুলে মানুষের বিশ্বাস চুরি করেন। পাঠ্যবইয়ে নিজের মতাদর্শ চাপিয়ে শিশুর মন চুরি করেন।
এরপর সর্বস্ব চুরি যাওয়া নিঃস্ব সাধারণ মানুষগুলির হাতে আর কী পড়ে থাকে! ওই একটি মাত্র ভোট। নামেই গণতান্ত্রিক অধিকার। যা আবার দিনে-দুপুরে চুরি যায়। নেতা তো আর বহির্জগতের এলিয়েন নন, বিবেকরহিত এই সমাজের একজন। যেমন সমাজ, তার তেমন সেবক। তাই,চোর- মিথ্যেবাদী-নীতিহীন-দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে ভোট দিতে তার তর্জমা কাঁপে না। তিনিই আমাদের ইষ্ট দেবতা হয়ে ওঠেন। হাজার লাইনের ভিড়ে ভিক্ষে পাওয়া৫০০ টাকায় গৃহস্থের সংসার চলে। চাষার ফসল ফলে। বেকাররা ভাতা পায়। ব্রিগেডে গেলে ডিম-ভাত। ছোট ছোট খুশিতেই আমরা এত মজে থাকি, ওই বিনামূল্যে পাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার নির্বাচনের দিনে চপ-মুড়ির বিনিময়ে দান করে দিই। এ তো আমাদের দান, এ তো আমাদের আত্মসমর্পণ ওই নেতাদের চরণে…তাই তাঁরা বেশি ভোট পান, নিঃশর্তে।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

