- August 13th, 2022
হাফসোল-৩
ভোঁদাই এর শাপমুক্তি
প্রসেনজিৎ সরকার
বারবার প্রেমে হাফ-সোল খাওয়ার কারণে পুপুর বন্ধুরা ওকে ভোঁদাই বলে ডাকত। যখন ও ক্লাস টেনে পড়ে, তখন ক্লাস নাইনে পড়া পাড়ার মেয়ে মুমু ওর থেকে নোটসের খাতা নিতে আসত। মুমু যে পুপুকে পছন্দ করে, সেটা ও কোনওদিন বোঝেনি। সে বার পুজোর সময় মুমুর খুড়তুতো বোন এল ওদের পাড়ায়। ষষ্ঠীর দিন প্যাডেল-পুশার পরা মুমুর বোনকে দেখে পুপুর হৃদয়ে প্রেমের জোয়ার এল। দু’দিন প্রচুর ঝাড়ি-টারি চলার পর অষ্টমীর দিন পুপু অনেক আশায় বুক বেঁধে ওর বন্ধু সুমিত্রর মাধ্যমে মেয়েটিকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠাল। কিন্তু সে কথা মুমুর কানে পৌঁছতেই মুমু এসে পুপুকে যাচ্ছেতাই অপমান করল, সাথে শাসিয়েও গেল যে ভবিষ্যতে তার বোনের ব্যাপারে উৎসাহ দেখালে পুপুকে উদম ক্যালানি খাওয়াবে। এরপর সুমিত্র এসে বলল, ‘তুই একটা হাফগান্ডু। মুমুর তোকে পছন্দ আর তুই কি না ওর বোনকেই…..? শোন, মেয়েটা বলল তুই নাকি দু’দিন ধরে বিশ্রি ভাবে ওর দিকে তাকাচ্ছিস। ও সব আর করিস না। কেস খেয়ে যাবি। তুই বরং মুমুকে...’ পুপু ঢোঁক গিলে বলল, ‘মেয়েটার নাম কী রে?’ সুমিত্র ঝাঁজিয়ে উঠে বলল, ‘সে জেনে তোর কী হবে? ওরা অনেক দূরে থাকে। আমার মামার বাড়ির কাছে, বেলেঘাটায়।’
ক্লাস ইলেভেনে উঠে পুপু ক্লাসমেট সংযুক্তার প্রেমে পড়ল। সংযুক্তা ডাকাবুকো, বিস্তর ছেলেবন্ধু। তবে কোনও কারণে তারা কেউই সংযুক্তার সাথে প্রেমে আগ্রহী নয়। পুপু তাকে প্রেমপত্র দিতেই সংযুক্তা এক কথায় রাজি। তাকে নাকি এর আগে কেউ প্রেম নিবেদনই করেনি। দু’বছর লুকিয়ে-চুরিয়ে সিনেমা দেখা, পুজোয় বেড়ানো, চুমু-টুমু খাওয়া সব হল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের পর সংযুক্তা বিয়ের কার্ড নিয়ে হাজির। পাত্র ইংল্যান্ডে ডাক্তার। সংযুক্তার বাকি পড়াশোনা নাকি সেখানেই হবে। পুপুর মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল। বন্ধুদের কাছে শুনল ওরা নাকি সবই জানত। সংযুক্তা পুপুকে স্রেফ ল্যাজে খেলাচ্ছিল।
এরপর এক বছরের শোক পালন। কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পর সদ্য ফার্স্ট ইয়ারে জয়েন করা এক সুন্দরীকে দেখেই পুপুর কেন জানি না মনে হল মেয়েটি ওর খুব চেনা। যেন গত জন্মের প্রেমিকা।
অনেক ভেবে পুপু ওর ক্লাসমেট ইউনিয়নের নেতা অনিন্দ্যকে ধরল মেয়েটির সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়ার জন্য। অনিন্দ্য তখন ফ্রেশারদের সামলাচ্ছে। পুপুর অনুরোধ শুনে ওর প্রথম প্রতিক্রিয়া হল, ‘গুরু, তোমার তো জহুরির চোখ!’ পরদিন পুপু হাঁ-করে তাকিয়ে দেখল তার গতজন্মের প্রেমিকাকে বাইকের পিছনে বসিয়ে অনিন্দ্য হুউশ করে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেল। সে দিন আর ফিরলও না। তার পরের দিনও দু’জনেই উধাও। মনের দুঃখে পুপু কলেজ থেকে বেরিয়ে বাসস্টপে ন্যাড়া কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে দাঁড়িয়ে ভাবছিল যে পাহাড়ে গিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেবে কি না। এমন সময় জলতরঙ্গের মত একটা নারীকণ্ঠে ‘এই যে ভোঁদাই’ ডাক শুনে চমকে ফিরে পুপু দেখতে পেল দু’হাত দূরে তার গত জন্মের প্রেমিকা রাগী অথচ আদুরে বেড়ালের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
‘বন্ধুরা নামটা ঠিকই দিয়েছে। আমি বুবু। আমার বাড়ি বেলেঘাটায় হলেও মুমুর কাছে তোমার সব খবরই পাই। ওর মোবাইলে তোমার ছবিও দেখেছি। নিজের কথা নিজে বলার সাহস আর কবে হবে? ফের যদি আজেবাজে ছেলেদের আমার কাছে পাঠাও তা হলে...। যা বলার নিজে এসে বলবে। আমি ঠিক দু’দিন অপেক্ষা করব।’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সে ঝপ্ করে একটা অটোয় উঠে হাওয়া হয়ে গেল।
পুপুর মনে হল দুপুরের হলদে রোদটা হঠাৎ বসন্তকালের গোধুলিবেলার কনে দেখা আলোর রঙ নিয়েছে। কৃষ্ণচূড়া গাছটায় ঝেঁপে লাল-লাল ফুল এসেছে। চারপাশে কেউ সবুজ ঘাসের গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। আর সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছেটাও উধাও।
এরপর পুপু আবার হাফ-সোল খেয়েছিল, নাকি ওর ভোঁদাই অপবাদ ঘুচেছিল, সে অন্য গল্প।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

