- August 13th, 2022
গাইড যখন শক্তি
গাইড যখন শক্তি
দেবাশিস দাশগুপ্ত
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উইক এন্ড ট্যুরিস্ট গাইড বইটির এ বার অর্ধশতবর্ষ। বইটি সম্পর্কে দু-চার কথা না লিখলে অন্যায়, অবিচার করা হবে, অমানুষের তকমা পড়বে আরএক শক্তি, শক্তি সামন্তের যাবতীয় সিনেমার মতোই।
বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৭৯-তে। ভ্রমণ কাহিনিগুলো সবই গত শতকের ষাটের দশকের। কিন্তু এই বইয়ের বিশেষত্ব কী, শুধুই কি লেখকের নাম শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলে? না। ভ্রমণ কাহিনি বাংলায় বহু লেখা হয়েছে, ধারাবাহিক, পরে বইয়ের আকারে, এসব বহু হয়েছে। সেই ১৮৪০-এ বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের নদীপথে ভ্রমণ বৃত্তান্ত, যা কি না বাংলা গদ্যে লেখা প্রথম হিসেবে ধরা হয়। সেই তখন থেকে এ যাবৎ বহু লেখাই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু উইক এন্ড ট্যুরিস্ট গাইড সম্ভবত বাংলা ভাষায় লেখা বেড়ানোর প্রথম গাইড বুক। মানে জায়গার বর্ণনার সঙ্গে কোথায় থাকবেন, কী ভাবে যাবেন, দূরত্ব কত, থাকার খরচ কত, কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে এই বইতে।
ভূমিকায় লেখক নিজেই জানিয়েছেন, বাংলায় এ ধরনের বই নেই। এই বইটি লেখার ক্ষেত্রে তিনি তথ্যের সাহায্য নিয়েছিলেন এককালে রেল কোম্পানি প্রকাশিত দু’খণ্ডে ‘বাংলার ভ্রমণ’ নামে দু’টি ‘অমূল্যগ্রন্থ’ থেকে।
তবে এই বইয়ে ‘বিখ্যাত সুন্দরকে সর্বদা এড়িয়ে’ গিয়েছেন তিনি। তুলে ধরেছেন সেই সব জায়গা যা অচেনা, প্রসিদ্ধিহীন, পোড়োবাড়ি, বাংলো, ছোটনাগপুরের পাহাড়, বাংলার আনাচ কানাচ যা তিনি ভালোবাসতেন, ‘নিরুদ্দেশে’ চলে যেতেন। সেখানে গিয়ে চিঠি পাঠিয়ে কলকাতা থেকে বন্ধুদের ডেকে পাঠাতেন। কখনও সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, কখনও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সঙ্গী হতেন। লিখেছেন, সুনীল-সন্দীপ আর আমার বড় সুসময় ছিল তখন। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর প্রথম নিরুদ্দেশযাত্রার সঙ্গী সন্দীপন চট্টোপাধ্যয়কে।
একটু দিঘার বর্ণনা দিই, কেমন। এমনই গ্রীষ্মে গিয়েছিলেন। ‘এই দুঃসহ গরমেও এক ধরনের ছুটি-মাখা দমকা হাওয়া দেয় দিনে-দুপুরে। এ বার কালবৈশাখী দেখতে চলুন দিঘায়। শহরের ইস্কুল পাঠশালা তো বন্ধ। সুতরাং বেশ কয়েকটা দিন বগলদাবা করে চলে আসুন দিঘায়।’ ঘূর্ণিঝড়, স্কুল বন্ধ, এখনকার সঙ্গে চাইলে মিলও পেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন সেই হোটেল বিবরণ ছিল এরকম--- সৈকতাবাসের একতলা আর দোতলার দক্ষিণার ফারাক দু’টাকা। নীচে রুমের ভাড়া ১০ টাকা উপরে সেটা ১২ টাকা! রয়েছে সুইট। খরচ ২৪ টাকা ও ২০ টাকা! পরে জানানো হয়েছিল, (সাম্প্রতিক খবর, সৈকতাবাসে চার্জ প্রতিক্ষেত্রেই দু’টাকা করে বেড়েছে)। এমনকী ‘সৈকতাবাসে ডানলোপিলো গদি পাবেন’--এও লেখা ছিল! এক-ঘরা কটেজের ভাড়া ৫.২৫ পয়সা। দু’ঘরা ৬.৫০ পয়সা।
কী ভাবে যাবেন? ‘ট্রেনে এসে নামুন দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের খড়্গপুর স্টেশনে। কত আর সময় নেবে? এই ধরুন আড়াই ঘণ্টা। ১১৬ কিলোমিটার তো মাত্র পথ। সেখানে স্টেশনের গা থেকে মুহুর্মুহু বাস ছাড়ে। বাসে পথ ১২২ কিলোমিটারের বেশি না। ঘণ্টা দুয়েক সময় নেয় দিনে। রাতে সময় আরও ঠুকরে খায় বাস। গরমে রাতে যাওয়াই ভালো। আপনি যখন পৌঁছবেন তখন দিঘারও ঘুম ভাঙবে।’
আরও প্রচুর লেখা যেত, এত সাবলীল গদ্য, কোনও মারপ্যাঁচ নেই, জটিলতা নেই অথচ টেনে নিয়ে যাওয়ার আকুতি রয়েছে। যোগাযোগ, আস্তানা, হোটেল কোনওটাই সহজগম্য ছিল না কিন্তু, লেখার মধ্যে ছিল, যেন কত সহজ, যেন কী এত ভাবছেন, একবার বেরিয়ে পড়ুন, দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। এমন বইয়ের কথা ভুলে গেলে পাপ হয়। আমি বাবা পুণ্যিটা সেরে রাখলাম এই বেলা।
ইচ্ছা ছিল বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম বাংলা গদ্যে লেখা সেই ভ্রমণ কাহিনিও একটু লিখি। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই লেখার যা সাইজ হয়েছে, এ পর্যন্তই কেউ পড়বেন কি না, ঘোর সন্দেহ। এর উপর বহর আরও বাড়লে লোকে ভালো চোখে দেখবেন না। তাও শুধু বলে রাখি, বিশ্বনাথের নাতির নাম ছিল আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, যাঁকে বাংলার বাঘ বলা হত আর পুতির নাম? উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

