- August 16th, 2022
প্যালেস্তাইনি আন্দোলনে জোয়ার আনছে ইজরায়েলই
নিজস্ব প্রতিবেদন: হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরেই প্যালেস্তাইনি আন্দোলনকর্মীদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে ইজরায়েল। ঘটনাটা নতুন কিছু নয়। প্যালেস্তাইনের সমর্থনে আন্দোলন জোরালো হলেই তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার এটাই চেনা ছক। কিন্তু এ বার হয়তো ইজরায়েলের দমননীতি বুমেরাং হতে পারে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকদের গণহারে গ্রেপ্তারি শুধু যে প্রতিরোধের আগুনে ঘি ঢালছে তা নয়, প্রচারের আলোয় নিয়ে আসছে প্রতিবাদের এক নতুন প্রজন্মকে। নাছোড় লড়াইয়ের সংকল্পে স্থির।
অল্প বয়স, বঞ্চিতের প্রতিনিধিত্ব করার প্রবল দায়িত্ববোধ আর সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকরী ব্যবহার―এই তাঁদের অস্ত্র। নেট দুনিয়ার সহজ যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্যালেস্তাইনিদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। আর সে আবেদনে সাড়াও মিলেছে। সেই জন্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে তাঁদের কণ্ঠরোধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে ইজরায়েলের পুলিশ। কিন্তু হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড বলছে, এতে ফল হচ্ছে উল্টো। গ্রেপ্তারির জেরে প্রতিবাদের এই তরুণ মুখগুলো আরও বেশি পরিচিতি পাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হচ্ছেন দুনিয়া জুড়ে ছড়িয়ে থাকা তাঁদের লক্ষ লক্ষ অনুগামী।
উদাহরণ, মুনা অল-কুর্দ। পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ অঞ্চলে প্যালেস্তাইনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদ করায় ২৩ বছরের মেয়েটিকে আটক করে ইজরায়েলি পুলিশ। তাঁর জমজ ভাই মহম্মদকেও থানায় ডাকা হয়। মুনাকে তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া মাত্রই শুরু হয় প্রতিবাদ। থানা ঘেরাও হয়। মুনার মুক্তির দাবিতে #ফ্রিমুনাঅলকুর্দ-সহ একাধিক হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদের পর মুনা ও তাঁর ভাই, দু'জনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ঘটনা প্যালেস্তাইনি আন্দোলনে নতুন উদ্দীপনা এনে দিয়েছে। মুনা, মহম্মদরা হয়ে উঠেছেন প্রতিরোধের নতুন আইকন। মুখে মুখে ফিরছে তাঁদের নাম এবং তাঁদের মতো আরও অনেক উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের কাহিনি।
মুনার পরিবারের আদি বসত ছিল ইজরায়েলের হাইফা শহরে। সেখান থেকে উৎখাত হওয়ার পর গত শতকের মাঝামাঝি রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী সংস্থার সহায়তায় শেখ-জারাহ অঞ্চলে থিতু হন মুনার বাবা। ২০০৯ সালে যখন ইহুদিরা সেই বাড়িরও অর্ধেকটা দখল করে নিল, মুনা এবং মহম্মদের বয়স তখন ১১। অচেনা লোকজনের সঙ্গে একই বাড়িতে বেড়ে উঠতে বাধ্য হওয়া জমজ ভাইবোন সেই কিশোরবেলা থেকেই ইজরায়েলি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন। কিন্তু গত মার্চে ইজরায়েলের একটি আদালতের রায়ে তাঁদের পুরো বাড়িটাই ছেড়ে দিতে বলা হয়। আর তার পরেই সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে সরাসরি আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা।
মুনাদের উদ্দেশ্য ছিল ইজরায়েলের আইন ব্যবস্থায় প্যালেস্তাইনিদের প্রতি বৈষম্য এবং আদালতের রায়ে খাস জেরুজালেমের বুকে বেশ কিছু পরিবারের ঘরছাড়া হওয়ার ঘটনা বিশ্বের সামনে তুলে ধরা। অচিরেই ট্রেন্ডিং হয় #সেভশেখজারাহ, যা শুরু করেছিলেন এই দুই ভাইবোন। এক ইহুদি দখলকারীকে তাঁদের বাড়ি 'চুরি' করে নেওয়ার জন্য ধমকাচ্ছেন মুনা, এমন একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। জনপ্রিয় হয় মহম্মদের একটি সাক্ষাৎকারের অংশও। প্যালেস্তাইনিদের সমর্থনে শেখ জারাহ অঞ্চলে 'হিংসাত্মক' প্রতিবাদ তিনি সমর্থন করেন কি না, এক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, 'আপনি কি আমাকে এবং আমার পরিবারকে উৎখাত করার হিংসা সমর্থন করেন?'
উচ্ছেদের খাঁড়া ঝুলছে যে প্যালেস্তাইনি পরিবারগুলোর মাথায়, তাদের অসহায়তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে অনেকটাই সফল মুনারা। তাঁদের আন্দোলনের সাফল্য বলে দিচ্ছে, ভৌগোলিক গণ্ডি পেরিয়ে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্যালেস্তাইনিদের একজোট হওয়ার একটা মঞ্চ তৈরি হয়েছে। আর সেটাই মাথা ব্যথার কারণ ইজরায়েল প্রশাসনের। তরুণ প্রজন্মের প্রতিবাদকে যেনতেন প্রকারে গুঁড়িয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ। দাঙ্গা, সন্ত্রাসের নাম দিয়ে তাঁদের কাজকর্ম দমিয়ে দেওয়ার অবিরত চেষ্টা চলছে।
ইজরায়েলের মাটিতে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে নয়া জমানার প্রতিবাদীরা লড়াইটা বরাবর চালিয়ে যেতে পারবেন কি না বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন উপেক্ষা করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, তাঁদের চুপ করিয়ে দেওয়ার কাজটা খুব সহজ হবে না ইজরায়েলের পক্ষে। আর যাই হোক, দাঙ্গা দমন বা শান্তিরক্ষার অজুহাত খাটবে না। কারণ, মুনা বা মহম্মদের মতো তরুণ প্রতিবাদীরা হিংসায় ইন্ধন দিচ্ছিলেন, বাকি দুনিয়াকে এটা বিশ্বাস করাতে দস্তুরমতো বেগ পেতে হবে।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

