- August 13th, 2022
অশোক চালিশা
অশোক চালিশা
সুমন চট্টোপাধ্যায়
বন্ধু তো কতই আছে, হৃদমাঝারে আছে কয় জনা?
জীবন অনেক কিছু শেখায়, আমাকেও শিখিয়েছে, কেন না আমি যে ভাঙায় গড়া মানুষ। সর্বশেষ এবং সর্বোত্তম শিক্ষাটি হল, সুদিনে যে মুখগুলো চারপাশে ঘোরাঘুরি করে, যাদের একান্ত আপন, নিবেদিত স্বজন বলে মনে হয়, দুঃসময়ে তাদের বেশিরভাগই চোখের নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যায়, ডুবন্ত জাহাজ থেকে মূষিককূলের পলায়নের মতো। পাশে থেকে যায় সামান্যই কয় জন। আমার জীবনে অশোক মজুমদার তেমনই আত্মার স্বজন, দুর্দিনের বিশ্বস্ত সহচর। তাই আমার হৃদমাঝারের বাসিন্দা।
প্রকৃত বন্ধু কে, অনেক যুগ আগে চাণক্য তার সর্বশ্রেষ্ঠ সংজ্ঞাটি শুনিয়ে গিয়েছিলেন। ‘উৎসবে, ব্যসনে চৈব, দুর্ভিক্ষ, রাষ্ট্র বিপ্লবে, রাজদ্বারে, শ্মশানে চ যঃ তিষ্ঠতি, সঃ বান্ধবঃ’। আমার অভিজ্ঞতা বলে, সবার মধ্যে রাজদ্বারের ভয় সবচেয়ে বেশি। উৎসবে বন্ধু পাবেনই, শ্মশানেও পেলে পেতে পারেন, রাজদ্বারে পৌঁছলে দেখবেন ডাইনে-বাঁয়ে কেউ কোথাও নেই, আপনি নিঃসঙ্গ, একাকী দাঁড়িয়ে আছেন ঘাসিরাম কোতোয়ালের সামনে। তখন যদি কাউকে পাশে পান জানবেন তিনিই আপনার প্রকৃত বন্ধু, আত্মার পরমাত্মীয়।
অশোকের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব চল্লিশ বছরের, সেই আজকালের গোড়াপত্তনের দিন থেকে। ওই কাঁচা বয়সেই অশোকের তোলা ছবি দেখে বোঝা যেত এই আলোকচিত্রীর জাত ও ধাত ভিন্ন, দেখার চোখ ভিন্ন, খবরের বোধও ভিন্ন। যত দিন গিয়েছে সেই কুঁড়ি একটু একটু করে প্রস্ফুটিত হতে হতে শীতের ডালিয়ার রূপ ধারণ করেছে। খবরের জগতে অশোক মজুমদার আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রী এ কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে আমার কোনও কুন্ঠা নেই। অশোক যদি আমার বন্ধু না হয়ে দুশমন হত তাহলেও আমি একই কথা বলতাম। দুর্দিনে ওকে যদি কাছে না দেখতাম, তাহলেও।
এটি অশোকের একটা পরিচয়, সবচেয়ে বড় পরিচয়, সন্দেহ নেই। লোকে ওকে একডাকে চেনে আলোকচিত্রী হিসেবেই। এর বাইরেও ওর একটি পরিচয় আছে যেটা ছবির মতো প্রকাশ্যে না এলেও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। আর্ত, অসুস্থ, অশক্ত মানুষের খোঁজ পেলেই তার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়া। আমাদের মনোবৃত্তি যখন ছোট হতে হতে স্বার্থপরতারই নামান্তর হয়ে উঠেছে তখন নিঃস্বার্থ সেবা করার মানুষ দূরবীণ দিলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। ভগিনী (আমার) নিবেদিতার সাহচর্যে অশোকের স্বভাবে এমন রূপান্তর হয়েছে কি না বলতে পারি না, তবে এটুকু বুঝি অশোক-নিবেদিতার মতো প্রচার বিমুখ, প্রায় অন্তরালে থাকা সেবক-দম্পতির প্রকাশ্য স্বীকৃতি পাওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
চিন্তা নেই অশোক, করোনা যদি করুণা না করে, শরীর স্বাস্থ্য যদি সচল থাকে, তাহলে আমিই তোদের যুগ্মগলায় রজনীগন্ধার মালা পড়াব। পর্দার পিছন থেকে হাল্কা বন্দিশ শোনা যাবে সেতারের, তৈরি হবে এক পরম রমণীয় মুহূর্ত।
কী কাকা লজ্জা পাচ্ছো না তো!


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

