- August 12th, 2022
ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পাচ্ছি
নিরানন্দর জার্নাল (১)
ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পাচ্ছি
সুমন চট্টোপাধ্যায়
আবার আমরা সেই অবাঞ্ছিত অথচ অনিবার্য প্রশ্নটির সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। বলা ভালো দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। কোনটা আগে, জীবন না জীবিকা?
জানি এটা অনেকটা মুর্গি না ডিম গোছেরই প্রশ্ন। জীবন থাকলে তবে তো জীবিকা। আবার উল্টো দিক থেকে দেখলে জীবিকাই যদি না থাকে জীবন রাখব কী করে?
গত পক্ষকাল যাবৎ এই দোলাচলের মধ্যে থাকতে থাকতে আজ সকালে আমার সংশয় অথবা বিভ্রান্তি অনেকটাই দূর হয়েছে। দেশটাকে বাঁচাতে হলে, প্রাণঘাতী ভাইরাসের শিকল ছিন্ন করতে হলে ফের দেশে লকডাউন করতে হবে। করতেই হবে। নান্য পন্থা বিদ্যতে।
আমার বিভ্রান্তি দূর করতে সাহায্য করল ডঃ অ্যান্টনি ফাউচির সাক্ষাৎকার, আজ সকালে যেটি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়েছে। এই মুহূর্তে ভারতের কী করা উচিত জানতে চাওয়া হলে ফাউচির সোজা-সাপ্টা উত্তর, ‘Shut down the country for few weeks … hang in there, take care of each other, we will get to a normal.’
ফাউচি এলেবেলে কেউ হলে তাঁর অভিমত অনায়াসে অগ্রাহ্য করা যেত। কিন্তু তিনি কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে পরিচিত নাম, দুনিয়ার সর্বত্র মিডিয়ায় তাঁর নামটি শিরোনামে থাকে। তিনি বাইডেন প্রশাসনের চিফ মেডিক্যাল অফিসার, এর আগে অন্তত সাতজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করেছেন। কোভিড-বিধ্বস্ত আমেরিকা আজ যে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পেরেছে তাতে ফাউচির অবদান অনস্বীকার্য।
ফাউচি জানেন কোনও দেশই সাধ করে লকডাউনের মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে চায় না, সবাই সঙ্গত কারণেই ইতস্তত করে। কিন্তু পরিস্থিতি যখন আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তখন লকডাউন বিনে গতি নেই। টানা ছয় মাস ধরে বিরতিহীন লকডাউন চালিয়ে যেতে হবে না, কয়েকটি সপ্তাহই যথেষ্ট। একবার লকডাউন হয়ে গেলে ভবিষ্যতের রূপরেখাটি চট করে তৈরি করে ফেলা যায়। প্রথমে স্থির করতে হবে আশু কর্তব্য, তারপরে অন্তর্বর্তীকালীন পরিকল্পনা, সবশেষে সুদূরপ্রসারি বন্দোবস্ত।
গতকালই করণ থাপারের সঙ্গে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী গৌতম মেননের একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। গৌতম বলছেন, ১০ মে থেকে ২৫ মে-র মধ্যে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছবে যখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ-ছয় লাখ ছাড়িয়ে যাবে আর দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত সাত হাজারে পৌঁছে যাবে। বাইবেলে আছে, ‘The bell’s ringing is supposed to usher in the Apocalypse.’
এখনও সময় আছে, ঘণ্টাধ্বনি সবে শুরু হয়েছে মাত্র।
কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? দিল্লি বারেবারে সঙ্কেত পাঠাচ্ছে দেশজোড়া লকডাউনের কোনও সম্ভাবনাই নেই। তার মানে বলটা চলে এসেছে রাজ্যের কোর্টে, যে যা ভালো মনে করছে সেই ভাবেই খাপছাড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে যাচ্ছে। কোথাও উইক-এন্ডে লকডাউন, কোথাও রাতে কার্ফু, সর্বত্রই সঠিক পরিকল্পনার অভাব। আমাদের রাজ্যে একটা আজানুলম্বিত নির্বাচন পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। ফল বেরোনোর পরে কী হবে, কবে কার সরকার গঠিত হবে এই মুহূর্তে কিছুই পরিষ্কার নয়। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে এখনও পর্যন্ত বিবিধ রাজ্যে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সবই হোমিওপ্যাথিক ডোজ, যার প্লাসিবো এফেক্ট ছাড়া কিচ্ছুটি নেই। অথচ এখনই দরকার ছিল ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টি-বায়োটিকের।
রাজ্যে নতুন সরকার যাঁরাই গঠন করুন আমার বিনীত আবেদন হবে অবিলম্বে লকডাউন।
টাইম বোমা অ্যাক্টিভেটেড হয়ে গিয়েছে, কানে আসছে ঘণ্টাধ্বনি।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

