- August 16th, 2022
ব্রুটাস, তুমিও!
সুমন চট্টোপাধ্যায়
বাংলার বিনোদন জগৎ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, খেলোয়াড় কিংবা ফড়ে-সাংবাদিকদের কথা না হয় সচেতন ভাবে বাদ দেওয়া গেল। আমাদের টালিগঞ্জ পাড়ার চেয়ে বলিউড অনেক বেশি সাহসী, সামাজিক ভাবে অনেক বেশি দায়বদ্ধ, শাসকের দাসানুদাস একেবারেই নয়। বাংলায় এমন দু’চারজন আছেন বটে, তাঁদের অবস্থান প্রান্তিক, পপুলার-অ্যাপিল তেমন একটা নেই। সরকারের দেওয়া স্বীকৃতি ব্যবসায়ীরা মরে গেলেও প্রত্যাহার করবে না। এমন দুর্মতি তাদের ডিএনএ বরদাস্ত করবে না। খেলোয়াড়দের কাছে সবটাই খেলা খেলা, অযথা তাদের বিতর্কে জড়ানো অর্থহীন। ৩০-৪০ বছর ধরে ফড়েগিরি করার পরে এইটুকু স্বীকৃতি তো সাংবাদিকদের প্রাপ্যই। মায়ের চরণে সেবার কি কোনও দক্ষিণা থাকবে না?
শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া কেউ আর মাতামাতি করে না। তার জন্য শব্দ নষ্ট নাই বা করলাম। তার আদেখলাপনা দেখলে একে আর জাত কবি বলে ভাবতে ভালো লাগে না, সবটাই শ্রী-হীন মনে হয়। আবুল বাশার সাহেব, ফুল বৌয়ের মতো সাড়া জাগানো উপন্যাসের লেখক, অধুনা ভীমরতিগ্রস্ত, কীসের জন্য তা তিনি নিজেই বলতে পারবেন। আমরা কেবল রাজনীতিকদের শিবির বদল দেখি, কবি, সাহিত্যিক, কলাকুশলীদের মধ্যে একটা দল কত বড় পাল্টিবাজ আমরা তা খেয়ালই করি না। পাল্টিবাজ কবি-সাহিত্যিক আর দলবদলু দাদা-দিদিদের মধ্যে কারা বেশি নিকৃষ্ট তা নিয়ে জম্পেশ বিতর্ক হতেই পারে।
এদের বাইরে তিন অতীব গুণী বঙ্গসন্তানের মঞ্চ আলো করে বসে থাকাটা আমার খুবই দৃষ্টিকটূ লেগেছে। এঁদের একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, বাকি দু’জন অর্থশাস্ত্রের অতি উজ্জ্বল নক্ষত্র। এই দু’জনের মধ্যে একজন আবার নোবেল পুরস্কার জিতে ভারতকে জগৎসভার শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছেন। দেব-নুসরৎ-ঋতুপর্ণা-নীতু সরকারদের মাঝখানে এঁদের কেমন দেখাচ্ছিল পরে টেলিভিশনে তাঁরা নিজেরা সেই দৃশ্য দেখেছেন কি? দেখে কি তাঁদের একবারও মনে হয়নি, ঈশ বড্ড লজ্জার ব্যাপার হয়ে গেল এটা! তাঁরা চান আর না চান, এই ছবি দেখে ভাবীকাল কিন্তু তাঁদের নিয়ে উপহাস করতে পারে। বোধহয় করবেই।
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কী করে এড়িয়ে যেতে হয়, অমর্ত্য সেন তাঁদের সামনে কিন্তু সেই দৃষ্টান্ত হাতে গরম তৈরি করে দিয়েছিলেন। তিনি সচেতন ভাবেই এই অনুষ্ঠান এড়িয়ে গিয়েছেন এবং সেটাই তাঁর কাছে প্রত্যাশিত ছিল। যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁর কাছে বঙ্গবিভূষণ কোনও খেতাব হলো? অক্সফোর্ডে পিএইচডি করার পরে কেউ কি পুরসভার প্রাইমারি ক্লাসে ভর্তি হতে আসে? তার চেয়েও বড় কথা, এ পর্যন্ত যাঁদের এই বঙ্গবিভূষণ খেতাব দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে অমর্ত্য সেনকে একই বন্ধনীতে আনা যায়? আনা যায় অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে? কৌশিক বসুকে? এমনকী বিকাশ সিংহকেও? আনা যে যায় না, সেই বোধটুকুই যাঁরা পুরস্কার দিয়েছেন, তাঁদের নেই। এই তিনজন কী কারণে যশস্বী, কী তাঁদের গবেষণার বিষয়, তৃণমূল মন্ত্রিসভায় কতজন তার সঠিক উত্তর দিতে পারবেন তা সংশয়ের বিষয়।
সব পরিচয়ের ওপরে এই তিন জন শিক্ষক-গবেষক। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার গলিত শবের দুর্গন্ধ তাঁদের নাকে আসেনি বলা যাবে না। যে সরকার দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র লুটের রাজত্ব কায়েম করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে গর্বের জায়গাটিকে ভাগাড়ের শকুন দিয়ে ভর্তি করে দিয়েছেন, তাঁদের হাত থেকে তিন ভুবনজয়ী শিক্ষাব্রতীর খেতাব নেওয়ার দৃশ্য সত্যিই মর্মান্তিক। পুরস্কার যাঁরা নিলেন তাঁরা কেবল বঙ্গবিভূষণ কেন, বঙ্গরত্ন, সরকারি সিলমোহরের ওপর তা নির্ভর করে না। দিলেন যাঁরা বাংলার ইতিহাস তাঁদের প্রতি একেবারেই সদয় হবে না, এ কথা এখনই হলফ করে বলে দেওয়া যায়।
আর হ্যাঁ, প্রাপকদের তালিকায় এমন একজন বশংবদ প্রাক্তন বিচারপতি ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর হাইকোর্ট বিরোধী গর্জন যিনি মন দিয়ে শুনেছেন, মঞ্চ ছেড়ে যাওয়া তো দূরস্থান, দু’কানে আঙুল দিতেও তাঁকে দেখা যায়নি। আর একজন চিকিৎসক-প্রশাসকও ছিলেন, যিনি এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডকে জেল-পালিয়েদের শরণার্থী শিবিরে পরিণত করে বাংলার গর্বের একটি প্রতিষ্ঠানের মান-মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছেন।
এমন চামচা-খচিত সভায় বড্ড বেমানান লাগছিল ওই তিন শিক্ষাব্রতীকে।


Arts and Literature
Bioscope
Columns
Green Field
Health World
Interviews
Investigation
Live Life King Size
Man-Woman
Memoir
Mind Matters
News
No Harm Knowing
Personal History
Real Simple
Save to Live
Suman Nama
Today in History
Translation
Trivia
Who Why What How

